বিশেষ করে, রোজার মধ্যে দোকান পাট খুলে দেওয়া এবং শিথিল হয়ে যাওয়া লকডাউন করোনা পরিস্থিতিকে একটা ভয়ংকর দিকে নিয়ে যাচ্ছে বলে আশংকা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। আর এ রকম একটি পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য সামনের দিনগুলোতে কিছু সর্বনাশ অপেক্ষা করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, এখন বাংলাদেশের জন্য সামনে কিছু ঘটনা নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, অবশ্যম্ভাবী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ঘটনাগুলো ঘটবেই।

বাংলাদেশের জন্য কী কী সর্বনাশ অপেক্ষা করছে একটু আমরা দেখে নিতে পারি-

চাপ সামলাতে পারবে না হাসপাতালগুলো

করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়লে চাপ সামলাতে পারবে না করোনার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলো। তখন রোগীরা উপচে পড়বে। চার থেকে পাঁচ শতাংশের যে ক্রিটিকাল রোগী, সেই রোগীদের জন্য আইসিইউ দেয়া, ডায়ালাইসিস করা কিংবা অক্সিজেন দেয়া দুরূহ হয়ে পড়বে। ফলে এক ধরনের অব্যবস্থায় আকীর্ণ হবে করোনা চিকিৎসা ব্যবস্থা। মানুষের মধ্যে দুর্ভোগ বহুগুণ বেড়ে যাবে।

সাধারণ হাসপাতালগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে করোনা

করোনার বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে যখন রোগী উপচে পড়বে, ঠাঁই দেয়ার জায়গা থাকবে না, তখন সরকার বাধ্য হয়েই সাধারণ হাসপাতালগুলোকে উন্মুক্ত করে দেবে। যেমন- ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে করোনার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ফলে কার্যত ওইহাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের চিকিৎসার পথ বন্ধ হয়ে যাবে অথবা ওই হাসপাতালগুলোতে ছড়িয়ে পড়বে করোনা। এর ফলে সামাজিক সংক্রমণ একটি ভয়াবহ অবস্থায় মোর নিতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

আচমকা মৃত্যুর হার বেড়ে যেতে পারে

যখন হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ সামলাতে ব্যর্থ হবে, তখন অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে করোনার চিকিৎসা শুরু করা হবে। তখন সেই হাসপাতালগুলোতে হৃদরোগ, কিডনি রোগী বা অন্যান্য রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা মুমূর্ষু অবস্থার মধ্যে পড়বেন। আবার করোনার মুমূর্ষু রোগীরা চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যু মুখে পতিত হবেন। ফলে আচমকাই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যেতে পারে বলে আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীর সংকট

বেশি সংখ্যক চিকিৎসক যখন আক্রান্ত হয়ে পড়বেন তখন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীর সংকট দেখা দেবে। ইতিমধ্যেই যা দেখা দিতে শুরু করেছে। এই সংকট যখন বাড়বে তখন আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থাই মুখ থুবড়ে পড়বে। এর ফলে হাসপাতালগুলোতে যারা করোনায় আক্রান্ত, তারা যেমন চিকিৎসা দিতে পারবে না। আবার যারা চিকিৎসা দিতে পারবেন অর্থাৎ যারা আক্রান্ত হননি, তারাও ভয়ে এবং আতংকের কারণে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখবেন, কোনরকম চিকিৎসা দেবেন না। যার ফলে একটা চিকিৎসা শূন্যতা তৈরি হবে, যে পরিস্থিতিটা ইতিমধ্যেই এখন তৈরি হয়েছে

চিকিৎসা উপকরণের সংকট

দীর্ঘ মেয়াদী প্রস্তুতি না থাকায় চিকিৎসা উপকরণের সংকট দেখা দেবে। শুরু থেকে চিকিৎসা উপকরণ নিয়ে নানা রকম সংকট এবং তেলেসমতি চলছিলো। বিশেষ করে, পিপিই এবং এন-৯৫ মাস্ক নিয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটছিল তার ফলে চিকিৎসার উপকরণের প্রস্তুতি সংকটের কথা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সংকট যখন দীর্ঘ মেয়াদি হবে তখন চিকিৎসা উপকরণের সংকট আরও ঘনীভূত হবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। চিকিৎসা উপকরণের সংকট শুধুমাত্র ডাক্তারদের সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে নয়; অক্সিজেন, টেস্টিং কিটসহ অন্যান্য উপকরণের যখন সংকট আরও বাড়বে, তখন আমরা একটা ভয়াবহ অন্ধকারাচ্ছন্ন পরিস্থিতির মধ্যে প্রবেশ করবো বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

কাজেই বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি শুরুতেই সামাল দেয়া দরকার ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে করোনা রোগী যত বাড়বে, সংকটগুলো তত ঘনীভূত হবে এবং আমাদের অনেকগুলো ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হবে। সেই পরিস্থিতিটি আমাদের শুধু জনস্বাস্থ্যের জন্য না, সামগ্রিকভাবে আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।