অন্যান্য রোগশোকগুলো বাংলাদেশে যেভাবে থাকে, সেভাবে করোনা বসবাস করবে। মানুষের মাঝে উদ্বেগ আতঙ্ক আস্তে আস্তে কমে যাবে। এ ধরণের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, বাংলাদেশের জলবায়ু, আর্থসামাজিক বাস্তবতা ও মানুষের আচার আচরণের বৈশিষ্ট্যগত কারণেই বাংলাদেশ করোনার জন্য উপযুক্ত চারণক্ষেত্র নয়। করোনা বাংলাদেশে এই কারণে মহামারির তাণ্ডব দেখাতে পারবে না। এর পক্ষে বিশেষজ্ঞরা যে সমস্ত যুক্তিগুলো দিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে-

পরিবেশ ও আবহাওয়াবাংলাদেশ নাতিশীতোষ্ণ এবং এখন আমাদের গরমকাল শুরু হয়েছে। এখানে প্রচণ্ড শীত পড়ে না। বিজ্ঞানীরা এবং বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি স্পষ্ট যে শীতের সময় করোনা অনেক সক্রিয় হয়। গরমে অতটা সক্রিয় হয় না। যদিও এখন পর্যন্ত তথ্য প্রমাণ দিয়ে বলা যায়নি যে গরমে করোনার মৃত্যু হয়। কিন্তু দেখা গেছে যে, বেশি উষ্ণতায় কভিড-১৯ অতো তাণ্ডব দেখাতে পারে না।

আর এই কারণেই বাংলাদেশের যেই আবহাওয়া এখানে যেমন রকম উষ্ণতা রয়েছে, তেমনি বৃষ্টিও রয়েছে। উষ্ণতায় যেমন ভাইরাস কাজ করতে পারে না, তেমনি বৃষ্টিতে ভাইরাস মারা যায়। অন্যান্য ভাইরাসের ক্ষেত্রে সেটি প্রমাণিত। কাজেই বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়ছে, যে কারণেই বাংলাদেশে করোনা খুব বড় ধরনের তাণ্ডব দেখাতে পারবে না বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।

মানুষের বৈশিষ্ট্যবাংলাদেশের মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য দেশের মানুষের চেয়ে বেশি। আমাদের দেশের মানুষরা যেভাবে ভেজাল খাবার খায়, অপরিচ্ছন্ন খাবার দাবার খায়, দুষিত পানি পান করে। ফলে শরীরের মধ্যে আপনাআপনি একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে গেছে। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে বাংলাদেশের মানুষরা সহজে কোন রোগে কাবু হয় না। আর এই কারণেই বাংলাদেশে করোনার পরাজয় হবে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞরা।

আর্থ সামাজিক অবস্থাবাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থা হলো একটি সংগ্রামরত আর্থসামাজিক বাস্তবতা। বাংলাদেশের মানুষকে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হয়, সংগ্রাম করতে হয় এবং লড়াই করতে হয়। লড়াই-সংগ্রাম করেই এ দেশের মানুষকে বাঁচতে হয়। এই আর্থসামাজিক বাস্তবতার কারণে যে কোন দুর্যোগই হোক না কেন বাংলাদেশের মানুষ সাহস করে সেই দুর্যোগ মোকাবেলা করে। করোনার ক্ষেত্রেও মানুষ আতঙ্কিত না হয়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবেলা করছে। ভয় না পেয়ে তারা তাদের কাজের জন্য বেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ হচ্ছে, তারা উপেক্ষা করছে। এই উপেক্ষার কারণে তাদের মধ্যে কোভিড-১৯ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হচ্ছে। এই চক্রাবৃত্ত করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সাহস যোগাচ্ছে। কারণ করোনা মোকাবেলার ক্ষেত্রে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সাহস সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর বলে মনে করছে বিজ্ঞানীরা।

বাংলাদেশের করোনার ধরনএখন পর্যন্ত বাংলাদেশে করোনার সংখ্যা বাড়ছে সেটা যেমন সত্যি, তেমনি যে হারে মৃত্যুর সংখ্যা অন্যান্য দেশগুলোতে বাড়ছে, বাংলাদেশে সেরকম মারা যাচ্ছে না। মৃত্যুর সংখ্যা কম হওয়ার কারণে এই রোগটি বাংলাদেশে ভয়াবহ হচ্ছে না।

মৃত্যুর সংখ্যা কম হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হলো বাংলাদেশ একটি তরুণ অধ্যুষিত রাষ্ট্র। আর তরুণদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আপনাআপনি বেশি। তরুণদের মধ্যে মৃত্যুর হার অনেক কম। করোনায় মৃত্যুবরণ করার হার সবচেয়ে বেশি হল প্রবীণদের মধ্যে। এই কারণে বাংলাদেশে করোনার জয়ের সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।

ভ্যাক্সিন, মেডিসিন ইত্যাদিবিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, বাংলাদেশে করোনা এসেছে বিলম্বে। এই সময়ে পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে তারা এখন ভ্যাক্সিন মেডিসিন ইত্যাদি নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে কিছু কিছু ওষুধ বাজারে এসেছে। বাংলাদেশে করোনার ভয়ংকর রূপ শুরু হওয়ার আগেই হয়তোবা তা আমাদের হাতে চলে আসবে। যার ফলে যে পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ইউরোপীয় দেশগুলোকে পড়তে হয়েছিল, সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পড়বে না।

এভাবেই করোনা হেরে যাবে বলে মনে করছেন কিছু কিছু বিজ্ঞানী। তবে এটা শুধু আশাবাদ। এর পক্ষে এখন পর্যন্ত প্রমাণিত কোন তথ্য উপাত্ত নেই। কিন্তু বিজ্ঞানীরা মনে করছে করোনা জয়ে আশাবাদই সবচেয়ে বড় অস্ত্র।