| ঢাকা, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শাহরিয়ার নাফিসকে নিয়ে মায়ের মর্মস্পর্শী খোলা চিঠি

জাতীয় ডেস্ক . স্পোর্টস আওয়ার ২৪
২০২০ মে ০৯ ১৯:১৬:১৩
শাহরিয়ার নাফিসকে নিয়ে মায়ের মর্মস্পর্শী খোলা চিঠি

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিষেক বছরে ৭টি ওডিআই ম্যাচে দুটি অর্ধশতকের সাহায্যে ২৫৪ রান করে বুঝিয়ে দেন হারিয়ে যেতে আসেননি তিনি। ২০০৬ সালটা কাটিয়েছেন স্বপ্নের মতো। কিন্তু ২০০৮ সালে ভারতের বিদ্রোহী ক্রিকেট লিগ আইসিএলে ঢাকা ওরিয়র্সের হয়ে নাম লিখিয়েই নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ২৩ মাস পর টেস্টে ফিরে প্রত্যাবর্তনকে স্মরণীয় করতে পারেননি।

২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ৯৭ রানের সেই ইনিংসটি এখনো পোড়ায় তাকে আক্ষেপে। ওই টেস্টের পর ৭ ইনিংসে ফিফটি শূন্য, ২০১৩-এর পর টেস্টে আর ফিরতেই পারেননি। ২০১১-এর পর আর ফিরতে পারেননি ওয়ানডেতে, তা নিয়তি বলেই মেনে নিয়েছেন। এখনো জাতীয় দলে ফেরার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে অনেক উথান-পতনের মাধ্যমে ক্রিকেটে এসেছেন নাফিস। আর এই ক্রিকেটারকে নিয়ে মর্মস্পর্শী এক খোলা চিঠি লিখেছেন তাঁর গর্ভধারণী মা (সালম আনজুম লতা)। যেখানে উঠে এসেছে নাফিসের শৈশবের গল্প। মায়ের স্বপ্নের কথা। পাঠকদের জন্যে তুলে ধরা হলো নাফিসের মায়ের খোলা চিঠি-

২০০৩ সাল। এইচ এস সি পরীক্ষার আর কয়েক মাস বাকি। শ্রীলঙ্কা সফরের জন্য যখন আমার ছেলে শাহরিয়ার নাফীস সিলেক্ট হলো আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। কি করবো? কলেজ থেকে কিভাবে পারমিশন নিবো? দেড় মাস ক্লাশ না করলে ওরই বা কি হবে? একটা এ্যাপ্লিকেশন নিয়ে সোজা চলে গেলাম ওর কলেজে। এ্যাপ্লিকেশন এর সাথে আমাকে অনেক অনুনয় বিনয়ও করতে হলো। এর আগেও একবার সেন্ট যোসেফ স্কুলে এমনটা করতে হয়েছিল।

অনূর্ধ্ব-১৫ ক্রিকেট টূর্নামেন্ট খেলতে যখন মালয়েশিয়া গিয়েছিল। একই অবস্থা এবারও। তবে এবার একটা সুবিধা ছিল ততদিনে ওকে টিচাররা চিনতে শুরু করেছেন। পেপারে মাঝেমধ্যেই ছবি, ইন্টারভিউ আসতো। শর্ত সাপেক্ষে অনুমতি পাওয়া গেলো। শ্রীলংকা থেকে আসার দুই আড়াই মাস পড়েই ওর ফাইনাল পরীক্ষা হয়েছিল। যেদিন ওর রেজাল্ট বেরুবে আমি ওর সাথে কলেজে গিয়েছিলাম। খুব টেনশন হচ্ছিল।

সম্ভবত বেলা চারটার দিকে রেজাল্ট পেলাম। বানিজ্য বিভাগ থেকে জিপিএ ৪’৪০ পেয়েছিল। ওদের সময় (ব্যাচ ২০০৩) চতুর্থ বিষয় যোগ হয়নি। ওর রেজাল্ট পেয়ে আমি খুব খুশী হলাম । সেদিনই পাকিস্তান ট্যুরের জন্য টিম ঘোষনা করার কথা। কলেজ থেকে জাতীয় স্টেডিয়ামে গিয়ে শুনলাম আবীর (শাহরিয়ার নাফিস) ১৫ জনের দলে আছে। খুশীর এই খবরটি আমাকে দিয়েছিল Javed Islam Taposh। একই দিনে দু’দুটো সুসংবাদ নিয়ে সেদিন বাসায় ফিরেছিলাম।

গতকাল আমার ইনবক্সে M Jahid Hasan Bappy আমাকে একটা ছবি পাঠিয়েছে। ছবিটা ২০০৪ সালের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর কমার্স ফ্যাকাল্টির করিডোরে। আবীরের পাশে একজন চা বিক্রেতা। ছবিটা সেসময় পত্রিকায়ও এসেছিল। অনেকক্ষন খুব মনযোগ দিয়ে ছবিটা দেখলাম। দেখতে দেখতে আমি ফিরে গেলাম আজ থেকে ১৭ বছর আগে।

২০০৩ সাল। বড় ছেলে শাহরিয়ার নটরডেম কলেজ থেকে কেবল এইচ এস সি পাশ করেছে। ওকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ পড়াবার খুব ইচ্ছে। ইচ্ছে থাকলেই তো হবেনা। ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে পাশ তো করতে হবে। সেজন্য রেজাল্টের কিছুদিন পরেই খোঁজ খবর নিয়ে কোচিং এ ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিলাম। যাতায়াত সুবিধার জন্য UCC’র ফার্মগেট শাখায় ভর্তি করালাম। কোচিং এ ভর্তি হবার পরপরই চলে গেলো বিকেএসপিতে। একটা দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প ছিল।

সেখান থেকে ফিরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই ওর ভর্তি পরীক্ষা হলো। UCC তে ৩০০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়ে মাত্র তিন দিন ক্লাশ করেছে। ওই সময়টায় শুধু দাঁতে দাঁত চেপে থাকতাম। আর আল্লাহর কাছে বলতাম আল্লাহ তুমি কি না করতে পারো। ছেলে তো মোটেই সিরিয়াস না। কি হবে? ওকে বলতাম , যত যাই বলো , প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে কিন্তু আমি তোমাকে পড়াতে পারবোনা। সেই সাধ্য আমার নেই।

কুরবানী ঈদের আগে লিখিত পরীক্ষা হলো। রেজাল্ট দিতে খুব বেশী দেরী হয়নি। সেদিন সম্ভবত শুক্রবার ছিল। ভোর বেলা পেপারটা হাতে নিয়ে যখনই দেখলাম “সি” ইউনিটের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে আমার হার্টবিট বেড়ে গেলো। আমি কাউকে কিছু না বলে ওর এডমিট কার্ডটা বের করে খুজঁতে থাকলাম। যতক্ষন না ওর রোল নম্বরটা পাচ্ছিলাম ততক্ষন যে আমার কি অবস্থা বোঝাতে পারবোনা।

বেশী সময় লাগেনি। কিন্তু এই সময়টুকু মনে হয়েছে অনন্তকাল। ওর রোল নম্বরটা চোখে পড়তেই এক চিৎকার। আবীর আর আদীব (নাফিসের ছোট ভাই) দুই ভাই ঘুমাচ্ছিল। মশারীর ভিতরে মাথা ঢুকিয়ে বল্লাম , আবীর তোমার রেজাল্ট দিয়েছে। পাশ করেছো। আমার দিকে একবার তাকিয়ে পাশ ফিরে আবার ঘুমিয়ে গেলো। যেন ধরেই নিয়েছিল ও পাশ করবে।

কিন্তু আমি জানি এত সহজ ছিলনা।স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। ছেলে আমার স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ চান্স পেয়েছে। তখন বন্ধু বান্ধবীদের মধ্যে Selima Begum ডলির ছেলে মেডিকেলে পড়ে। আমার জানা মতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনো কেউ ভর্তি হয়নি।

আবীর ভর্তি হবার পরে জেনেছি Shahida Yesmin ডলির মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি তে, Zahra Hasina Parveen এর মেয়ে অর্থনীতিতে আর Ila Imam এর মেয়ে সামান্থা আই আর এ পড়ে। আবীরের পরে Kamrul Akhtary মেয়েও পড়েছে আআন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয় নিয়ে।

আবীর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ন হয়েছে। এবার মৌখিক পরীক্ষা। মেধা অনুযায়ী কে কোন ডিপার্টমেন্ট এ যাবে সেটাই নির্ধারণ হবে। ছেলের মনের ইচ্ছা মার্কেটিং। ও ৪০০ জন এর ভিতরেই ছিল। তাই বুঝতে পারছিলাম না মার্কেটিং পাবে কি পাবেনা। ভাইবার লম্বা লাইন। অপেক্ষা করছি। ছেলে অস্থির ! আমি সবসময় ওকে সাহস দিয়ে এসেছি। বল্লাম, মার্কেটিংই পাবে। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে মার্কেটিং এ পড়ার সুযোগ হলো।

ভর্তির জন্য ডিপার্টমেন্ট, রেজিস্টার বিল্ডিং, জনতা ব্যাংক (টি এস সি শাখা), এস এম হল সব জায়গায় এক এক করে ছেলেকে নিয়ে আমি গিয়েছি। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তখন ছেলের সাথে আমার নিজের ভর্তির গল্প করতাম। ক্লাশ শুরু হওয়া পর্যন্ত কয়েকদিন গেলাম ওর সাথে । ছেলে বড় হয়ে গেছে। এখনতো ছাড়তেই হবে। মাস খানেক নিজে গাড়িতে দিয়ে আসতাম। আসার সময় ও একাই চলে আসতো।

একদিকে লেখাপড়া আর একদিকে ক্রিকেট। দুটো চালিয়ে যেতে ওরও পরিশ্রম করতে হয়েছে। আজ ভাবি কেমন করে দিনগুলো চলে গেলো। একটা সন্তানকে এই পর্যন্ত নিয়ে আসা খুব সহজ নয়। কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয় সে শুধু বাবা মায়েরাই জানেন। প্রত্যেকটা বাবা মা-ই চান তাদের সন্তানরা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক।

মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। মানুষের মত মানুষ হোক। সমস্ত ভাল কাজের সাথে সম্পৃক্ত হোক। সন্তানরাও যেন ভুলে না যায় বাবা মায়ের বিশেষ করে মায়েদের এই ত্যাগের কথা। সকল বাবা মায়ের প্রতি শুভকামনা।(লতা। অ্যারিজোনা থেকে। ০৮/০৫/২০২০)

প্রসঙ্গত যে, শাহরিয়ার নাফিস এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের হয়ে ৭৫টি আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচ খেলে ৩১.৪৪ ব্যাটিং গড়ে করেছেন ২,২০১ রান। শতক ৪টি ও অর্ধশতক ১৩টি। নাফিসের টেস্ট ক্রিকেটে উল্লেখযোগ্য অর্জনের মধ্যে একটি হলো, বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শতক হাঁকানো। বাংলাদেশের হয়ে ২০১৩ সালে সর্বশেষ টেস্ট ম্যাচ খেলা নাফিস ২৪টি টেস্টে ২৬.৩৯ ব্যাটিং গড়ে ১,২৬৭ রান করেছেন।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

ক্রিকেট

এইমাত্র পাওয়া গেলো তামিমের ফিটনেস পরিক্ষার রেজাল্ট,তবে কি জাতিয় দলে খেলতে পারবেন তামিম

এইমাত্র পাওয়া গেলো তামিমের ফিটনেস পরিক্ষার রেজাল্ট,তবে কি জাতিয় দলে খেলতে পারবেন তামিম

আসন্ন জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) টি-টোয়েন্টি ভার্সনে খেলতে দেখা যাবে তামিম ইকবালকে। এই টুর্নামেন্টে খেলার ...

চরম উত্তেজনায় এইমাত্র শেষ হলো বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের ওয়ানডে ম্যাচ,জেনেনিন ফলাফল

চরম উত্তেজনায় এইমাত্র শেষ হলো বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ডের ওয়ানডে ম্যাচ,জেনেনিন ফলাফল

বাংলাদেশ নারী দল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ...

ফুটবল

পয়েন্ট টেবিল প্রকাশ : ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে আরও যত পয়েন্ট দরকার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার

পয়েন্ট টেবিল প্রকাশ : ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে আরও যত পয়েন্ট দরকার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার

২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক ফুটবল সূচির প্রায় শেষ প্রান্তে এসে নিজেদের বছরের শেষ ম্যাচ খেলেছে দক্ষিণ ...

এইমাত্র পাওয়া : ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

এইমাত্র পাওয়া : ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে ফাইনালে আর্জেন্টিনা

কয়েক দিন আগেই পেরুর লিমাতে পর্দা উঠেছিল দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের অনূর্ধ্ব-২০ ফুটসাল টুর্নামেন্ট। যেখানে দ্বিতীয় ...



রে