তাই এলাকার সবাই নিজ থেকেই বেশি সাবধান। কেউ অতি প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছেন না। প্রশাসনও এ ব্যাপারে কঠোর।' সরকারি কর্মচারী হিসেবে টোলারবাগ ডি-টাইপ কোয়ার্টারে বসবাসকারী এক নারী এভাবেই গতকাল শনিবার ওই এলাকার চিত্র বর্ণনা করলেন। কেমন আছেন টোলারবাগবাসী? এরই মধ্যে ওই এলাকায় করোনায় আক্রান্ত দুই বাসিন্দা মারা গেছেন। শনাক্ত হয়েছেন আরও একাধিক। তাই টোলারবাগকে ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন সংশ্নিষ্টরা। টোলারবাগের খোঁজ নিতে গিয়ে সেখানকার জীবন-যাপনের নানা নতুন চিত্র ওঠে এলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর ও দক্ষিণ টোলারবাগে অন্তত ২০ হাজার লোকের বাস। দুই হাজার ২০০ ফ্ল্যাট রয়েছে। করোনায় প্রথমে টোলারবাগের এক বৃদ্ধের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর কার্যত ওই এলাকায় চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। বাইরের কোনো লোককে সেখানে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার জরুরি কোনো কারণ ছাড়া সেখান থেকে কোনো বাসিন্দাকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এলাকায় পুলিশের পক্ষ থেকে একাধিক দফায় মাইকিং করে বলা হয়েছে- খাবারসহ জরুরি কিছু প্রয়োজন হলে যেন পুলিশকে ফোন করা হয়। পুলিশ ওই খাবার পৌঁছে দেবে। ওষুধসহ দু-একটি মুদি দোকান ছাড়া সব দোকানপাট বন্ধ সেখানে। বাইরে অহেতুক কারও জড়ো হতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। অধিকাংশ বাসিন্দা নিজ থেকেই বের হচ্ছেন না। দু-একজন নিয়ম ভেঙে অহেতুক বাইরে গেলেও তাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এরই মধ্যে টোলারবাগের দুই বাসিন্দা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে দ্বিতীয় যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তার মেয়ের জামাই ও গৃহকর্মীও সংক্রমিত হয়েছেন। তারা আইসোলেশনে রয়েছেন। প্রথম যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তার চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত দুই চিকিৎসক করোনায় সংক্রমিত। এছাড়া ওই ব্যক্তির স্ত্রীর শরীরেও করোনাভাইরাস ধরা পড়ে।

স্থানীয় পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, টোলারবাগে প্রথম যে ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হন, তার ফ্ল্যাটের কেউ সম্প্রতি বিদেশ থেকে এসেছেন- এমন প্রমাণ মেলেনি। তবে পাঁচজন বিদেশফেরত টোলারবাগে এসে উঠেছেন সম্প্রতি। তাদের পূর্ণ নাম-ঠিকানা খোঁজা হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, টোলারবাগে যে দু'জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন, তারা কেউ সম্প্র্রতি বিদেশ থেকে আসেননি। তবে তারা নিয়মিত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন। একজন মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন। এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন সচেতনতার অংশ হিসেবে আপাতত টোলারবাগের মসজিদে কম যাচ্ছেন। বাসায় থেকেই নামাজ আদায় করছেন।

টোলারবাগের আরেক বাসিন্দা বলেন, 'এলাকায় করোনা আক্রান্ত রোগীর কথা জানতে পেরে আমরা ঢাকায় অন্যত্র এক পরিবারের বাসায় উঠেছি।'

অন্য একটি সূত্র বলছে, টোলারবাগ এলাকার রাস্তাঘাট জীবাণুমুক্ত করা জরুরি হলেও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রথমে সেখানে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো হয়নি। আতঙ্কে সিটি করপোরেশনের স্থানীয় কর্মীরা টোলারবাগে যেতে চাচ্ছিলেন না। পরে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এরপর সেখানে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো হয়। শুক্রবার মসজিদও জীবাণুনাশক দিয়ে ধোয়ামোছা করা হয়।

পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি মোস্তাক আহমেদ বলেন, 'পুরো টোলারবাগ পুলিশ পাহারায় রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে সেখানে জীবাণুনাশক ওষুধ ছিটানো হয়। এছাড়া প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনটি মেশিনও কেনা হয়েছে। এর মাধ্যমে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।'

পুলিশের দারুস সালাম জোনের এডিসি মাহমুদা আফরোজ লাকি বলেন, 'টোলারবাগের লোকজন নিজ থেকে অত্যন্ত সতর্ক। তারা পুলিশকে সহায়তা করছেন। মসজিদের ইমামদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। তারা মুসল্লিদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।

উত্তর টোলারবাগের বাড়ির মালিক সমিতির সভাপতি সুভাশীষ বিশ্বাস সাধন বলেন, 'টোলারবাগের কোনো বাসিন্দা নতুনভাবে করোনায় আক্রান্ত না হওয়ায় সবার মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি এসেছে। এলাকার সিনিয়র সিটিজেনদের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।'