শুক্রবার হরিয়ানার একটি আদালত ধর্ষণের মামলায় এই বাবাকে দোষী সাব্যস্ত করেছে। যা নিয়ে গোটা হরিয়ানা আর পাঞ্জাবে রীতিমতো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সত্যিই ধর্মগুরু রাম রহিম একটি বর্ণময় চরিত্র বটে।

এই রকস্টার বাবার হরিয়ানা ও পাঞ্জাব রাজ্যে রয়েছে অন্তত ৫ লাখের বেশি সরাসরি ভক্ত। তারা দাবি করছেন, গোটা বিশ্বে গুরু রাম রহিমের ছয় কোটি ভক্ত অনুরাগী আছে। তবে গুরু রাম রহিমকে সব সময়ই বিতর্ক তাড়া করে ফিরেছে। কখনও তিনি নিজেই বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন।

ধর্মগুরু রাম রহিম ডেরা সাচ্চা সৌদা নামের একটি সম্প্রদায়ের নেতা। হরিয়ানার সিরসায় তার প্রকাণ্ড হাইটেক আশ্রম। তাকে সব সময়ই ঘিরে থাকে সশস্ত্র ব্যক্তিগত রক্ষীর দল। শিখ, হিন্দু, মুসলিম সব ধর্মের চেতনার মিশেলেই তৈরি হয়েছে তার নিজস্ব ধর্মীয় সম্প্রদায়।

তার এই ডেরা সাচ্চা সৌদার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। শাহ মস্তানা নামের এক ধর্মগুরু এর পত্তন করেন। গুরমিত সিং ১৯৯০ সালে সম্প্রদায়ের নেতৃত্বের ভার নিয়ে বর্তমান প্রধান হিসেবে আছেন।

সিনেমা দিয়ে ভক্তদের কাছে টানাঅনেকগুলি চলচ্চিত্র তিনি তৈরি করিয়েছেন। আর সেই সব ছবিতে নিজেই নানা রকম স্টান্ট দেখান। যেগুলো হরিয়ানা, পাঞ্জাবসহ উত্তরপ্রদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের যুবক, নারীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। বছর কয়েক আগে দেওয়া একটি সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, ‘যুব সমাজ যদি ধর্মীয় আলোচনা সভাগুলোতে আসতে না চায়, তারা সেই সময়ে লুকিয়ে হয়তো সিনেমা দেখতে চলে যায়। তাই আমি সিনেমা হলেই তাদের কাছে পৌঁছে গেছি।’

হরিয়ানার সিরসায় তার ডেরা সাচ্চা সৌদা আশ্রমের প্রাঙ্গণে নিয়মিত বসে পপ কনসার্ট। সেখানে গান ডেরার প্রধান, গুরমিত রাম রহিম সিং নিজেই - তার তুমুল জনপ্রিয় ‘ইউ আর মাই লাভ চার্জারে’র মতো আরও অনেক গান! চাক-চিক্যময় পোশাক-আশাক পরে গানের ভিডিওতে পারফর্ম করার জন্য তাকে অনেকে ‘রকস্টার বাবা’ নামে অভিহিত করেছেন।

রকস্টার বাবা তিনটি সিনেমা তৈরি করেছেন যেগুলো অনেক বিতর্কের পর কয়েকটি ভারতীয় ভাষায় মুক্তি পায়। এই সিনেমাগুলির একটি, এমএসজি: মেসেঞ্জার অফ গড' - এর ট্রেইলারে মি. সিংকে দেখা যায় বিভিন্ন স্টান্ট পারফর্ম করতে, অন্য গ্রহের বাসিন্দা, ভুত এবং হাতীর সাথে লড়াই করতে এবং খলনায়কদের শায়েস্তা করেতে।

‘গুরমিত রাম রহিমের সদম্ভে চলা- ফেরাটা নিঃসন্দেহে বলিউডি, যেটা তাকে 'সব হিরোর বাপ' বলে চালাতে যথেষ্ট,' দ্য হিন্দুস্তান টাইমস-এর এক পর্যালোচনায় বলা হয়।

'এমএসজি: মেসেঞ্জার অব গড' সিরিজের যে সিনেমাগুলোতে বাবা রাম রহিম নিজেই নায়ক গুরুজির অভিনয় করেছেন, হাজার হাজার গাড়ির কনভয় নিয়ে সেই ছবি দেখতে এসে তার ভক্তরা একাধিকবার দিল্লির কাছে গুরগাঁও অচল করে দিয়েছেন!

রকস্টার বাবাগুরমিত রাম রহিমের ভক্ত সমর্থকরা যে সবসময়ে শান্তিপূর্ণ জমায়েত করে তা নয়। এর আগে দাঙ্গা হাঙ্গামা থেকে শুরু করে তাদের গুরুজীকে নিয়ে প্রশ্ন তোলায় হত্যা পর্যন্ত হতে হয়েছে বেশ কয়েকজনকে - এমনটাই অভিযোগ।

একটি শিশুর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে অশান্তি১৯৯৮ সালে বেগু গ্রামের একটি শিশু ডেরার জিপে চাপা পড়ে মারা যায়। গ্রামবাসীদের সঙ্গে ডেরার বিরোধ শুরু হয়। আর সেই খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের ধমক দেওয়া হয়। হুমকি দেয়া হয়। পরে ডেরা সাচ্চা সৌদা আর সাংবাদিকদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির মিটমাট হয়।

যৌন নির্যাতনের অভিযোগ২০০২ সালের মে মাসে ডেরা সাচ্চা সৌদার এক নারী ভক্ত গুরমিত রাম রহিমের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেনামী চিঠি পাঠান। তার একটি প্রতিলিপি পাঠানো হয় পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছেও পাঠান ওই নারী ভক্ত।

দুমাসের মধ্যেই ডেরা সাচ্চা সৌদার পরিচালন সমিতির এক সদস্য রণজিৎ সিং খুন হয়ে যান। পরিচালন সমিতির সদস্যরা সন্দেহ করতেন যে মি. সিংই তাঁর বোনকে দিয়ে ওই বেনামী চিঠি লিখিয়েছিলেন। তাঁর বোন ওই আশ্রমের এক সাধিকা ছিলেন। ওই চিঠির ভিত্তিতেই হাইকোর্ট সিবিআই কে তদন্তের নির্দেশ দেয়।