| ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

দেশের ছায়াছবিতে দর্শক যা খোঁজেন

বিনোদন ডেস্ক . স্পোর্টস আওয়ার ২৪
২০১৭ জুলাই ২০ ১০:৩০:৪০
দেশের ছায়াছবিতে দর্শক যা খোঁজেন

ওই সময় ছোটরা কেউ একলা সিনেমা দেখার সাহস করত না। মা-বাবার অনুমতি লাগত। বেশির ভাগ শিশু-কিশোরের ছায়াছবি দেখার সুযোগ হতো পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। এর মধ্যেও আবার বাছবিচার চলত—এটা ছোটদের দেখার উপযোগী কি না ইত্যাদি।

ক্লাসে হাত-পায়ে বড় দু-চারজন ডাকাবুকো ছেলে মাঝেমধ্যে স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখত। সেটা ওই অপরিণত বয়সে লুকিয়ে সিগারেট ফোঁকার মতোই দুঃসাহসী ব্যাপার ছিল। ক্লাসের বাকি সব ছাত্র এদের ‘হিরো’ হিসেবে দেখতাম। বাহ্, বীর বটে!

একবার দুই সহপাঠী লুকিয়ে রাজ্জাক-ববিতার ‘অনন্ত প্রেম’ দেখে এল। টিফিন পিরিয়ডে গপ্পের থলে উজাড় করে দুই বন্ধু সেই প্রেমকাহিনি বর্ণনা করতে লাগল। একজন আবার বর্ণনার ফাঁকে ফাঁকে ‘রাজ্জাক’ সেজে ববিতাকে সামনে কল্পনা করে ছবিটির গানের কলি আওড়ায়, ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই...’

আমরা বাদবাকি সহপাঠীরা এমন মজে গিয়েছিলাম, কখন যে টিফিন পিরিয়ড শেষ হয়ে ব্যাকরণ স্যার এসে হাজির, তা টের পাইনি। তিনি কান ধরে টেনে ওই হিরোর গান থামিয়ে দিলেন।

ওই সময় ছেলেবুড়ো সব দর্শকের মধ্যে দেশের চলচ্চিত্রের অসামান্য প্রভাব বোঝাতেই এ গল্পের অবতারণা। সত্তর ও আশির দশক এ দেশের চলচ্চিত্রের জন্য ছিল স্বর্ণযুগ। এ সময় সামাজিক ও বাণিজ্যিক—দুই ধরনেরই অনেক ছবি দর্শকনন্দিত হয়েছে। বক্স অফিসেও ভালো সাড়া পেয়েছে। জহির রায়হান, এহতেশাম, মুস্তাফিজ, কাজী জহির, নারায়ণ ঘোষ মিতা, খান আতা, আমজাদ হোসেন, আলমগীর কবির, সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকি, আজিজুর রহমান, সুভাষ দত্ত, চাষী নজরুল ইসলাম প্রমুখ সুনির্মাতার হাতে অনেক ভালো ছবি তৈরি হয়েছে। একে একে এসব ছবির নাম বলতে গেলে এই স্বল্প পরিসরে কুলাবে না।

এর পাশাপাশি বাণিজ্যিক বা ধুমধাড়াক্কা ছবিরও চাহিদা ছিল। এর মধ্যে ইবনে মিজান, এ জে মিন্টু, দেওয়ান নজরুলসহ বেশ কয়েকজন নির্মাতা ব্র্যান্ডনেম। এসব নির্মাতার অনেক ছবিতে হিন্দি ছবির কাহিনির মিল খুঁজে পাওয়া গেলেও দর্শকদের বিনোদন বা মজা দেওয়ার গুণ ছিল তাঁদের। যেমন ইবনে মিজানের ‘এক মুঠো ভাত’। ওই সময়ের জনপ্রিয় রোমান্টিক জুটি ববিতা ও জাফর ইকবাল অভিনীত ছবিটির কাহিনির সঙ্গে হিন্দি ছবি ‘রোটি’-এর বেশ মিল ছিল। রাজেশ খান্না ও মমতাজ অভিনীত ‘রোটি’ দারুণ ব্যবসা করেছিল। ‘এক মুঠো ভাত’ও সফল। আবার হিন্দি ‘শোলে’ ছবির কাহিনির সঙ্গে প্রায় পুরোটাই মিল রয়েছে দেওয়ান নজরুলের ‘দোস্ত-দুশমন’ ছবির কাহিনির। এসব ছবি ছিল সুনির্মিত। বিনোদনের খোরাক ছিল পুরো মাত্রায়। বিনোদনপ্রত্যাশী দর্শক হলে গিয়ে ঠকেননি।

আশির দশকে শুরু হয় প্রযুক্তিপণ্যের আগ্রাসন। ভিসিআর-ভিসিপির মাধ্যমে মারদাঙ্গা আর দাপুটে হিন্দি ছবির বিশাল ভুবনের খোঁজ পেয়ে যান দর্শক। অমিতাভ বচ্চন, ধর্মেন্দ্র, রাজেশ খান্না, জিতেন্দ্র, মিঠুন চক্রবর্তী, বিনোদ খান্না, জ্যাকি শ্রফ, সঞ্চয় দত্ত, ঋষি কাপুর প্রমুখ বলিউড তারকার দোর্দণ্ড প্রতাপে মুগ্ধ দর্শক। রেখা, জয়া ভাদুড়ি, হেমা মালিনী, ডিম্পল কাপাডিয়া, জয়াপ্রদা, পুনম ধীলন, শ্রীদেবীর মতো বলিউড সুন্দরীদের নাচগানে তাঁরা মোহিত।

পরবর্তী সময়ে তিন খানের (আমির, শাহরুখ, সালমান) মতো তরুণ নায়ক এবং মাধুরী, জুহি চাওলা, ঐশ্বরিয়া, ক্যাটরিনা, প্রিয়াংকার মতো নায়িকারা তাঁদের দাপট ও প্রভাবকে আরও পোক্ত করেছেন। এরপর স্যাটেলাইট এসে আকাশ সংস্কৃতির দ্বার অবারিত করে দিলে বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাব আরও বিস্তৃত হয়। ছায়াছবির দর্শকেরা ক্রমে ঘরমুখী হয়ে পড়েন। এতে চলচ্চিত্রের মানুষ পড়ে যান বিপাকে। দেখা যায়, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা লগ্নি করেও মুনাফা তো দূরের কথা, আসল টাকাও উঠে আসছে না। এর মধ্যে ধূমকেতুর মতো আবির্ভূত হন তরুণ নায়ক সালমান শাহ। তাঁর সঙ্গে আরও কয়েকজন তরুণ নায়কের আগমন ঘটে। কিন্তু সালমান সবাইকে টপকে চলে যান এক নম্বরে। তাঁর সঙ্গে মৌসুমী ও শাবনূরের ছবিগুলো ব্যবসাসফল হতে থাকে। কিন্তু তিনি যেন ক্ষণিকের অতিথি। দেশের অগণিত দর্শককে ব্যথিত করে দপ করে নিভে যান এই তারকা।

পরবর্তী সময়ে যেসব নায়ক এসেছেন, কেউ আর সালমানের মতো আকাশচুম্বী হতে পারেননি। গ্ল্যামার কন্যাদের রাজত্বও সীমিত হয়ে এসেছে। তাঁরা একেকজন হুট করে আসেন আর চট করে চলে যান। ছায়াছবির উন্নতির চাকা চলতে থাকে ঢিমেতেতলায়। এরই মধ্যে মোরশেদুল ইসলাম, তারেক মাসুদ প্রমুখের মতো কিছু গুণী নির্মাতা মানসম্পন্ন কিছু ছবি নির্মাণ করেন। এসব ছবি নির্দিষ্ট কিছু দর্শকের মন ভরালেও আর্থিক সাফল্য সেভাবে আসেনি।

আশির দশকের একটা সময় কিছু নির্মাতা পুরোপুরি বাণিজ্যনির্ভর ছবি তৈরিতে মন দেন। এসব ছবিতে কোনো রকমে একটা কাহিনি দাঁড় করিয়ে নর্তন-কুর্দন ধাঁচের নাচগান দিতে থাকেন। আর দেন স্থূল কিছু ভাঁড়ামো। অঞ্জু ঘোষের মতো নায়িকা ছিলেন এসব ছবির মূল আকর্ষণ। এসব ছবি শুরুতে চমক সৃষ্টি করলেও পরে খেই হারিয়ে ফেলে। একঘেয়ে স্বাদ আর কত নেওয়া যায়? একপর্যায়ে চলচ্চিত্রের কিছু ব্যবসায়ী ছবিতে অপ্রাসঙ্গিকভাবে বিদেশি পর্নো ছবির অশ্লীল দৃশ্য (যা ‘কাটপিস’ বলে পরিচিত) জুড়ে দিয়ে হলে দর্শক টানার চেষ্টা করেন।

এ চেষ্টাও ব্যর্থ। দেখা গেছে, রাস্তাঘাটে নিম্নশ্রেণির মানুষের মধ্যে প্রচলিত অশ্লীল গালিও সিনেমার সংলাপে যাচ্ছে। এসব কারণে বরং সপরিবারে হলে বসে ছবি দেখার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। এদিকে প্রযুক্তির কল্যাণে ঘরে বসেই মানসম্পন্ন পছন্দের ছবি দেখার সুযোগ বেড়ে যাওয়ায় রুচিশীল ভদ্র পরিবারগুলো একপর্যায়ে হলে যাওয়া একেবারেই বন্ধ করে দেয়।

দেশের চলচ্চিত্রে এখন যে দুর্দিন যাচ্ছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজধানী তো বটেই, দেশের অনেক স্থানেই একসময় দর্শকে গমগম করা সিনেমা হলগুলো কঠিন সংকটে হাবুডুবু খাচ্ছে। টক্করে টিকতে না পেরে এর মধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে এককালের প্রসিদ্ধ গুলিস্তান হল। ঢাকার অন্যতম জমজমাট নগরকেন্দ্র গুলিস্তান আছে ঠিকই, শুধু হলটা নেই। পুরোনো দিনের দর্শক যাঁরা ওই প্রেক্ষাগৃহে ছবি দেখতেন, তাঁরা এখনো সেই স্মৃতি হাতড়ে নস্টালজিয়ায় ভোগেন। এ মায়া অন্য জিনিস, এর কোনো ব্যাখ্যা নেই।দেশের ছায়াছবিতে এ সময় দর্শকদের আকালের কথা ভাবলে মনে হয় এই মায়া জিনিসটাই মুছে গেছে। দর্শকেরা আগের মতো সেই মায়া বা টান অনুভব করেন না। এ জন্যই তাঁরা সিনেমা হলবিমুখ। আগে একটা নকল ছবিতেও দর্শক চিত্তবিনোদনের যে খোরাক পেতেন, এখন নকলমুক্ত বলে দাবি করা আসল ছবিতেও সে জিনিসটি পান না। ঘরে বসে স্যাটেলাইট চ্যানেলে অত্যাধুনিক গ্রাফিকসের শৈল্পিক গুণে ভরা ব্যয়বহুল হলিউডি আর বলিউডি ছবি দেখে তুলনামূলকভাবে ব্যাপক কম বাজেটে নির্মিত কারিগরি মানে পিছিয়ে থাকা এসব ছবি দর্শক আর দেখতে চান না।

দেশীয় চলচ্চিত্রের আঁতুড়ঘর এফডিসির দিকে তাকালে আরও দুঃখ লাগে। সেখানে আজ নবীন-প্রবীণ দলাদলি আর কাদা ছোড়াছুড়ি চলছে। এক শাকিব খানকেই নিয়ে কত কিচ্ছা-কাহিনি! অথচ সত্তর, আশি, এমনকি নব্বইয়ের দশকেও চলচ্চিত্রে এমন জটলা করার ফুরসত কোনো তারকার ছিল না। শুটিংয়ের শিডিউল দেওয়ারই সময় নেই, আবার জটলা!

এখানে আসল সমস্যাটা হলো, দেশের দর্শকেরা চলচ্চিত্রে আসলে কী দেখতে চান—এ নিয়ে সমীক্ষা বা জরিপের কোনো আয়োজন বা উদ্যোগ নেই। সাধারণ দর্শকের মনও কেউ বোঝার চেষ্টা করেন না। মনে পড়ে, একের পর এক ফ্লপ ছবির ভিড়ে তোজাম্মেল হক বকুলের ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ ছবিটি রাতারাতি কী বিপুল ব্যবসা করেছিল! অথচ ছবিটি আহামরি কিছুই নয়। এতে উপজীব্য ছিল গ্রামবাংলার চিরচেনা লোককাহিনি আর যুগ যুগ ধরে গ্রামের পথে-প্রান্তরে ভেসে বেড়ানো কিছু গান। এতে কি বোঝা যায় না শিকড়ের প্রতি মানুষের টান এখনো আছে? দরকার শুধু জুতমতো নাড়া দেওয়া।

এ ক্ষেত্রে আমরা ‘মনপুরা’ ছবির উদাহরণ টানতে পারি। ২০০৯ সালে মুক্তি পাওয়া ছবিটি দেশের সব ধরনের দর্শককে কেবল নাড়াই দেয়নি, বক্স অফিসে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। গ্রামীণ পটভূমিতে এ কালের চেনা বাস্তবতা সুনিপুণভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এ ছবিতে। গান আর গল্প এ ছবির প্রাণ। সে প্রাণে একাত্ম হয়েছে দর্শকদের প্রাণও।

সাম্প্রতিক ছবি ‘আয়নাবাজি’ আরেকটি উজ্জ্বল উদাহরণ। দর্শকেরা মারমার কাটকাট হয়ে ছবিটি দেখেছেন। এ দেশের চলচ্চিত্র দর্শকদের নতুন এক আয়নার সামনে দাঁড় করিয়েছে ছবিটি। এ ছবিতে যেমন বাণিজ্যিক উপাদান রয়েছে, তেমনি রয়েছে বয়ে চলা সময় ও বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। আছে মুগ্ধ হওয়ার মতো অভিনয় আর দৃশ্যায়ন। আছে ভিন্ন রকম আবেদনে ভরা নগরজীবনের প্রাণের গান।

ছবিতে ছোটখাটো কিছু ভুলচুক অবশ্য আছে, তবে নির্মাণশৈলীর উৎকর্ষে তা ঢাকা পড়েছে। প্রমাণিত হয়েছে, সেভাবে অভিনয় আদায় করে নিতে পারলে আমাদের দেশের অভিনয়শিল্পীরা কতটা অসাধারণ অভিনয় করেন!দর্শক আসলে এমন ছবিই চান, যে ছবি হবে এমন এক দর্পণ, যার মধ্যে দর্শক তাঁর সমাজ, সংস্কৃতি, চারপাশের জগৎটাকে দেখতে পাবেন। এ আয়নায় নতুন করে আবিষ্কার করবেন নিজেকে।

ক্রিকেট

টেস্ট ক্রিকেটে লজ্জার রেকর্ড : মাত্র ৪২ রানে অল-আউট

টেস্ট ক্রিকেটে লজ্জার রেকর্ড : মাত্র ৪২ রানে অল-আউট

জাতীয় ক্রিকেট লিগের (এনসিএল) ষষ্ঠ রাউন্ডে ইতিহাস গড়েছে রাজশাহী বিভাগ, তবে তা একেবারেই ভুল কারণে। ...

২০২৫ IPL নিলামে চমক দেখিয়ে রেকর্ড দামে দল পেলেন সাকিব

২০২৫ IPL নিলামে চমক দেখিয়ে রেকর্ড দামে দল পেলেন সাকিব

আইপিএলের ২০২৪ সালের নিলামকে ঘিরে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। বাংলাদেশের চার তারকা সাকিব ...

ফুটবল

পয়েন্ট টেবিল প্রকাশ : ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে আরও যত পয়েন্ট দরকার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার

পয়েন্ট টেবিল প্রকাশ : ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে আরও যত পয়েন্ট দরকার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার

২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক ফুটবল সূচির প্রায় শেষ প্রান্তে এসে নিজেদের বছরের শেষ ম্যাচ খেলেছে দক্ষিণ ...

২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা পেতে আরও যত পয়েন্ট দরকার আর্জেন্টিনার

২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা পেতে আরও যত পয়েন্ট দরকার আর্জেন্টিনার

লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে আর্জেন্টিনা। পেরুর বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে ২৫ ...



রে