‘বাংলাদেশে বিয়ের পর প্রতিদিনই আমাকে ধর্ষণ করা হতো’
‘মাত্র ছয় সপ্তাহ আমাদের বাংলাদেশে থাকার কথা ছিল, কিন্তু সেটা হয়ে গেলো দুইমাস। এরপরে তিনমাস, তারপরে ছয়মাস। আমরা সবাই বাড়ি আসার জন্য অস্থির হয়ে উঠলাম।’ বলেন মেরি।
‘আমি বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, আমি বাড়ি যেতে চাই, স্কুলে যেতে চাই, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। তিনি বলতেন, আমরা অনেক টাকা খরচ করে এখানে এসেছি…কতকিছু। কিন্তু সেটি ছিল অজুহাত, কারণ তখন তিনি আসলে আমার বিয়ের পরিকল্পনা করছিলেন।’
২০১৪ সাল থেকে ‘ফোর্সড ম্যারেজ’ বা জোর করে বিয়ে দেয়ার বিষয়টি ব্রিটেনে ‘অপরাধ’ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এরপরে ওয়েলসে এ ধরনের মাত্র একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে আর পুরো যুক্তরাজ্যজুড়ে চারটি ঘটনায় শাস্তি হয়েছে। যদিও যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের হিসাবে, প্রতি বছর ওয়েলসে অন্তত ১০০টি জোরপূর্বক বিয়ের ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে ক্যাম্পেইনাররা বলছেন, এই আইনে বাবা-মা কারাগারে যেতে পারে, এ রকম সম্ভাবনা থাকায় হয়তো অনেক ভুক্তভোগী বা ঘটনার শিকার মেয়ে সামনে এগিয়ে আসতে চান না।
যেমন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ৩৫ বছরের রুবি মেরি বলছেন, ‘এটা কঠিন, কারণ সবাই তার পরিবারকে ভালোবাসে…কিন্তু শেষ পর্যন্ত যেকোনো নির্যাতন আসলে নির্যাতনই।’
জোরপূর্বক বিয়ের শিকার হওয়ার সেই পরিস্থিতি নিয়ে রুবি মেরি বর্ণনা করেন, প্রায় প্রতিদিনই তিনি ধর্ষণের শিকার হতেন, যাতে তার নতুন স্বামী দ্রুত একটি বাচ্চার পিতা হতে পারেন এবং যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ পান। এখনো সেই দিনের কথা মনে আছে রুবি মেরির, যেদিন প্রথম তিনি নিজের বিয়ের কথা জানতে পারেন।
‘একদিন যখন আমরা পরিবারের সঙ্গে বসে রাতের খাবার খাচ্ছিলাম, তিনি (বাবা) বাইরে থেকে এসে খাবার টেবিলে বসে খেতে শুরু করলেন। এখনো আমার সেই দিনের কথা মনে আছে, যেন সেটা গতকালের ঘটনা।’
তার বাবা বলেন, ‘এটা কি চমৎকার হবে না, যদি আমরা রুবির বিয়ে দিয়ে দেই? ‘আমি খুবই বিব্রত হয়ে গিয়েছিলাম। আমার বয়স তখন খুবই কম, আমার খাবারের প্লেটটি মেঝেতে ছুঁড়ে ফেললাম, চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে নিজের রুমে ছুটে গেলাম। আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না, এই খবর আমি কীভাবে নেব- কীভাবে এর সঙ্গে নিজেকে মেলাবো?’ বলছেন রুবি মেরি।
‘আমি এরপর যেন একটা দরাদরির পণ্যে পরিণত হলাম। একজন করে আমার চাচারা এসে আমাকে দেখে যেতে লাগলো আর তারা যেন আমার দর করতে লাগলো। এটা ছিল ভয়াবহ একটা ব্যাপার। একজন ক্রীতদাসীর মতো ব্যবহার করা হচ্ছিল আমার সঙ্গে।’
‘আমি ছিলাম একটা অপরিচিত দেশে, সেখানে কার কাছে যেতে হবে, তা জানতাম না।’ দ্বিগুণ বয়সের একজন ব্যক্তির সঙ্গে জোর করে মেরির বিয়ে দেয়া হলো। বিয়ের দিন অনেক মানুষ তাকে দেখতে এসেছিল।
‘আমাকে পুতুলের মত সাজানো হলো। সবাই উঁকি মেরে হাসিমুখে নতুন বউ দেখতে এল। ‘শুধুমাত্র বসে বসে আমি ভাবছিলাম, আমি কি একটি বস্তু? তখন যেন যা করতে বলা হচ্ছে, তাই করছি। আমার মাথায় তখন শুধু ছিল ব্রিটেনে ফিরে আসার চিন্তা। ব্রিটেনে আসার জন্য যা কিছু করা দরকার, তাই করা।’
বিয়ের পরেই তার নতুন স্বামী একটি সন্তানের জন্য অস্থির হয়ে উঠলেন। ‘কম বা বেশি, প্রায় প্রত্যেক রাতেই আমাকে ধর্ষণ করা শুরু হলো, আমি যাতে তাড়াতাড়ি গর্ভবতী হতে পারি, যাতে তার (স্বামী) ব্রিটেনে আসার একটি পথ তৈরি হয়। এটাই ছিল তাদের পরিকল্পনা।’
রুবি মেরি গর্ভবতী হন এবং বাচ্চা জন্ম দেয়ার জন্য ওয়েলসে ফিরে আসেন। শিশুটির জন্মের পরেই তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। ‘এটা তাদের জন্য লজ্জাজনক বলে আমার পরিবারের মনে হয়েছে। এরপর অনেক দিনের জন্য আমার পরিবার আমাকে অস্বীকার করে গেছে।’
এখন জোরপূর্বক বিয়ের বিরুদ্ধে মানুষজনকে সচেতন করার জন্য একজন দূত হিসাবে কাজ করছেন রুবি মেরি। সূত্র: বিবিসি বাংলা
- কমলো সয়াবিন তেলের দাম, যা তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন
- এক খবরেই পাল্টে গেলো পেঁয়াজের দাম
- ১০ মিনিটের শক্তিশালী বৈশাখী ঝড়ে লণ্ডভণ্ড যে উপজেলা
- স্বর্ণের ভরি আজ হঠাৎ কত হলো জানেন
- নাটকীয়ভাবে অবিশ্বাস্য সুখবর পেলো বাংলাদেশ
- নাসুমকে চড় মারার চাঞ্চল্যকর অভিযোগের জবাবে মুখ খুললেন হাথুরু-সাথীরা
- বিদেশি ফল নয়, ঘরেই লুকিয়ে আছে সমাধান এই ৫ দেশি খাবারেই পাবেন পর্যাপ্ত ভিটামিন সি
- শীর্ষে দিল্লি,২ নাম্বারে ঢাকা
- সিলেটে বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে: উত্তেজনা চলছেই