সিনেমার কাহিনীকেও হার মানাবে আইয়ুব বাচ্চুর কিংবদন্তী শিল্পী হওয়ার পেছনের গল্প

এই গুণী শিল্পীর জন্ম ১৯৬২ সালের ১৬ আগস্ট চট্টগ্রাম শহরে। শিল্পীর ডাক নাম ছিল রবিন। পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন আইয়ুব বাচ্চু। সঙ্গীত চর্চার জন্য খুব একটা অনুকূল পরিবেশ যে তিনি পেয়েছিলেন তা কিন্তু নয়। সেই ছোটবেলা থেকেই সংসারে থেকেও বোহেমিয়ান রবিন। বাউন্ডুলে স্বভাবের জন্য সংসারের কিছুই যেন স্পর্শ করতে পারছিল না তাকে।
ঘরের সকলেই খুব ভালভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াইয়ে ব্যস্ত। কিন্তু রবিনের মন বলে অন্য কথা। তিনি গণমাধ্যমকে দেওয়া একাধিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘ভাবতাম ছকে বাঁধা জীবন আমার না। নয়টা-পাঁচটা চাকরি করার পেছনে ছোটার জন্য যেন জন্ম হয়নি আমার। আমি চলতাম আমার সুর ধরে। এ কারণে পরিবারের থেকে গোল্লায় গেছি শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গিয়েছিলো। পাত্তা দিতাম না। এরপর একদিন টিভিতে দেখা পেলাম আজম খানের।’
অনেক আগে থেকেই আজম খানের ভক্ত রবিন। মুগ্ধ হয়ে শুনছিলেন পপ সম্রাটের গান। পাশে ঝাঁকড়া চুলে বোতাম খোলা শার্টে একজন গিটার বাজাচ্ছেন অসাধারণ দক্ষতায়। সেই প্রথম পরিচয় গিটারে দক্ষ হাতের খেলা। হবেই না বা কেন? বাজাচ্ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম কিংবদন্তী গিটারিস্ট ‘নয়ন মুন্সি’। এই লোকটি বাংলাদেশের গিটার জগতে এক অনন্য নাম। সে সময়কার অনেক পরিচিত গান, যেমন- এই নীল মনিহার, মন শুধু মন ছুঁয়েছে, মেলায় যাই রে, আবার এলো যে সন্ধ্যা প্রভৃতি কালজয়ী গানের গিটারিস্ট তিনি। তার এই অনবদ্য বাজনা শুনে রবিন ঠিক করে ফেললেন, জীবনে আর কিছু চান না, শুধু এমন অসাধারণভাবে গিটার বাজাতে চান। সেই থেকেই গিটারের পিছে ছুটছিলেন তিনি।
শুরুটা ছিল সেই সময়কার আরেকজন গুণী গীটারিস্ট রুডি থমাসের হাত ধরে, যদিও গুরুমুখী বিদ্যার চাইতে স্ব-শিক্ষার্থীই ছিলেন বেশি। তবুও হাতে খড়িটা বেশ পোক্ত হাতেই হয়েছিল বলা চলে। কারণ রুডি থমাস ছিলেন তখন জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘সোলস’-এর অন্যতম সদস্য, আবার ‘ফিলিংস’ ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা। তার হাত ধরে ১৯৭৮ সালে ফিলিংসে যোগ দেন আইয়ুব বাচ্চু। ইংরেজি গানের কভার করার প্রবণতায় সেই সময় বেশি ছিল। প্রায় দু’বছরের মতো কাজ করার পর ১৯৮০ সালের দিকে পারস্পরিক মনোমালিন্যে ভেঙে যায় ফিলিংস। বেকার হয়ে পড়লেও কখনো মনোবল হারাননি তিনি। জানতেন একদিন ঠিকই তার গুণের কদর হবে। খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হলো না। ডাক পেয়ে গেলেন রুডি থমাসের কাছ থেকেই সোলসে যোগ দেয়ার জন্যে।
সোলস সেই সময় বাংলাদেশের সঙ্গীত জগত কাঁপানো ব্যান্ড দল। ‘না’ বলার তো প্রশ্নই আসে না। সাজেদ, নেওয়াজ, লুলু, নকিব খান, পিলু সকলেই খুব সহজেই কাছের করে নিয়েছিল চট্টগ্রামের এই গুণী গিটারিস্টকে। প্রায় দশটি বছর পার করেছিলেন এই শক্তিশালী ব্যান্ড দলটির সাথে। এই দশটি বছর আইয়ুব বাচ্চুর জীবনেও ছিল খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ১৯৮৬ সালের দিকে আইয়ুব বাচ্চু ‘রক্তগোলাপ’ নামে একটি একক অ্যালবাম বের করেন।
এর ঠিক দুই বছর পর ১৯৮৮-১৯৮৯ এর দিকে ‘ময়না’ নামে আরেকটি অ্যালবাম বের করেন যেটি অডিও জগতে খুব সাড়া ফেলে। শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর লেখা ‘হারানো বিকেলের গল্প’ গানটিতে আইয়ুব বাচ্চু প্রথম কণ্ঠ দেন। এই লোকটির কাছ থেকেই পরবর্তীতে ‘একদিন ঘুম ভাঙ্গা শহরে’, ‘সময় যেন কাটে না’, ‘ভালোবাসি ঐ সবুজের মেলা’, ‘হৃদয় কাঁদামাটির কোনো মূর্তি নয়’, ‘চায়ের কাপে পরিচয়’, ‘দখিনা হাওয়ায় ঐ তোমার চুলে’ ‘যতিন স্যারের ক্লাসে’র মতো অসাধারণ সব গানের কথা আমরা পাই।
সোলসের সাথে দশ বছর কাটানোর পর মনে হঠাৎ যেন কিছু না পাওয়ার আকুতি। সঙ্গীত জগতে নিজের কাজের কিছু ছাপ রেখে যাওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা। সোলস তখন মেলোডি ধাচের গান তৈরিতে অনেক বেশি অভ্যস্ত। কিন্তু দুরন্ত ছেলেটির মনে বাজছে রক, পাওয়ার আর নতুন কিছু করার নিরন্তর প্রচেষ্টা। তাই সোলস ত্যাগ করে ১৯৯০ সালের ৫ই এপ্রিল নিজের ব্যান্ড দল প্রতিষ্ঠা করলেন আইয়ুব বাচ্চু, যার নাম রাখলেন ‘লিটল রিভার ব্যান্ড’। পরবর্তীতে এর নাম বদলে রাখা হয় ‘লাভ রান্স ব্লাইন্ড’। সেই বছরই এল.আর.বি. তাদের যাত্রা শুরু করে একটি ডাবল এলবাম দিয়ে যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম ডাবল এলবাম। এল.আর.বি’র প্রথম এই ডাবলসটি বের হয়েছিল মাধবী এবং হকার নামে। এই অ্যালবাম দুটোর বেশ কিছু গান খুব জনপ্রিয় হয় যা আজও আমাদের কানে বাজে।
১৯৯৫ সালে তিনি বের করেন তৃতীয় একক অ্যালবাম ‘কষ্ট’। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা একক অ্যালবামের একটি বলে অবিহিত করা হয় এটিকে। এই অ্যালবামের প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তা পায়, বিশেষ করে কষ্ট কাকে বলে, কষ্ট পেতে ভালোবাসি, অবাক হৃদয়, আমিও মানুষ। তিনি অনেক বাংলা ছবিতে প্লে ব্যাক করেছেন। ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’ বাংলা ছবির অন্যতম একটি জনপ্রিয় গান। এটি তাঁর গাওয়া প্রথম সিনেমার গান। ব্যাচেলর মুভিতে ‘আমি তো প্রেমে পড়িনি’ গানটিও শ্রোতা মনে বেশ সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়।
একবার কলকাতার যাদবপুরে বাজাতে গিয়ে এক মজার ঘটনার সম্মুখীন হন আইয়ুব বাচ্চু। একটা পোস্টারে দেখতে পান যে, দেশের অনেক নবাগত ব্যান্ডদলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিযোগিতা হচ্ছে। খেলার ছলে নিজেদের নাম দিয়ে বসলেন আইয়ুব বাচ্চু। পরে প্রতিযোগিতার কর্ণধারেরা যাদবপুরে তাদের কনসার্ট শুনতে গেল। শুনে তাদের বাজনায় এতোই মুগ্ধ হলেন যে প্রতিযোগীর আসন থেকে সরিয়ে বিচারকের আসনে তুলে দিলেন।
গিটারের কথা আসলে আইয়ুব বাচ্চু এক অনন্য নাম। আমাদের পাশের দেশ ভারতের অনেক খ্যাতনামা গায়ক এবং সুরকার তাকে এক বাক্যে আইডল মানেন। জিমি হেন্ড্রিক্স, জিম্মি পেজ, রিচি ব্ল্যাকমোর এবং জো স্যাট্রিয়ানীর বাজনায় তিনি দারুণভাবে অনুপ্রাণিত। আইয়ুব বাচ্চুর নিজের একটি স্টুডিও আছে। ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত এই মিউজিক স্টুডিওটির নাম এবি কিচেন। সঙ্গীতে আরও নতুন নতুন শিল্পী গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে তিনি এটি করেছিলেন।
আইয়ুব বাচ্চু মিউজিককে বরাবরই পেশা হিসেবে নিতে চেয়েছিলেন। টানা ৩০ মিনিট গিটার বাজিয়ে তাঁর প্রথম আয় ছির ৩০ টাকা, যা জীবদ্দশায় তিনি কখনো ভুলতে পারেননি। এটা তাঁর জীবনের যে শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি ছিল তা তিনি সবসময় স্বীকার করতেন।
সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে আজ চলে গেছেন কিংবদন্তি সঙ্গীতশিল্পী আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর মৃত্যুতে বাংলাগানের এক স্বর্ণাক্ষরে লেখা অধ্যায় শেষ হলো। বৃহস্পতিবার সকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেন।
- ৪ না মেরে ছক্কা হাঁকানোয় বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বদলে বাংলাদেশ
- ১৭৮ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশ, এরপর যা ঘটল তা অনেকেই ভাবেননি
- চরম দু:সংবাদ : ঢাকার অবস্থা ভয়াবহ খারাপ
- হাসিনার বিরুদ্ধে ফেটে পড়ল ভারত! বিস্ফোরক প্রতিবেদন প্রকাশ ভারতীয় সাংবাদিক
- ফাঁদে পড়লেন ওবায়দুল কাদের, এবার পালাবেন কোথাই
- রাজস্থানে 'রক্তপাত' ভড়কে গিয়ে দ্রাবিড় যা বললেন...
- বৃদ্ধের ট্রেনের নিচে ঝাঁ-প দেওয়ার আসল কারণ জানালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
- কঠিন সমীকরণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, হেরেও যেভাবে বিশ্বকাপে যাবে বাংলাদেশ
- বাংলাদেশিদের ভিসা বাতিলের আসল কারণ ফাঁস
- ঢাকায় ভারতের কে এই RAW স্টেশন হেড, যা জানা গেল, কাঁপছে রাজনৈতিক অঙ্গন"
- পিএসএলে ইতিহাস গড়লেন হাসান আলি, ভাঙলেন ওয়াহাব রিয়াজের রেকর্ড
- I Love You নয়, বলুন এই কথাগুলো – প্রেমে পড়বে সেকেন্ডেই
- ভয়াবহ ভূমিকম্প : বিধ্বস্ত ৮০ ভাগ সরকারি ভবন
- পাকিস্তানকে মাঝারি রানের টার্গেট দিলো বাংলাদেশ
- বন্ধ হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের পথ