| ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

পুতিনের পাতা ফাঁদে পা দিলেন ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক . স্পোর্টস আওয়ার ২৪
২০১৭ জুলাই ০৯ ০০:০৬:৫৬
পুতিনের পাতা ফাঁদে পা দিলেন ট্রাম্প

ক্রিমিয়ায় সম্প্রসারণবাদী তৎপরতার প্রেক্ষাপটে রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তিন বছর ধরে বহাল রয়েছে। আর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া আমেরিকার অধিকাংশ নাগরিকই মনে করেন যে, বিশ্বের অন্য অনেক নির্বাচনের মতো মার্কিন নির্বাচনেও রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল, যার নেতৃত্বে ছিলেন পুতিন।

গত ডিসেম্বরে নিজ মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তিন ডজনেরও বেশি রুশ গুপ্তচরকে আমেরিকা থেকে বিতাড়িত করেন। একই সঙ্গে বন্ধ করেন রুশদের দ্বারা পরিচালিত দুটি কম্পাউন্ডও। দুই দলেরই (ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান) বহু নেতা রাশিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার পরিসর বাড়ানোর মত দিয়েছেন। এ সব বিবেচনায় পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে আমেরিকারই সুবিধাজনক অবস্থানে থাকার কথা। কিন্তু কী ঘটল?

শুরুতেই বলে নেওয়া প্রয়োজন যে, জনমতকে প্রভাবিত করায় রুশরা ভীষণ দক্ষ। কূটনীতির জনসংশ্লিষ্ট বিষয়াদির প্রয়োজনীয়তা তারা অনেকের চেয়েই ভালো বোঝে। এটি তাদের জন্য পরিকল্পনাকে সহজ করে দেয়। ফলে কোনো দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আমেরিকার অবস্থানকে পাশ কাটিয়ে আলোচনার নিয়ন্ত্রণ যেন রুশ পক্ষ নিতে না পারে সে বিষয়টি আগে থেকেই নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে দক্ষতার প্রমাণও দিয়েছে আমেরিকা।

আলোচনার মঞ্চ প্রস্তুত কিংবা বৈশ্বিক বিভিন্ন লক্ষ্য নির্ধারণের কৌশল সম্পর্কেও রুশ পক্ষ যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। আন্তর্জাতিক দর্শকদের মুগ্ধ করতে ক্যামেরার সামনে নিজেকে উপস্থাপনের বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের চমৎকার দক্ষতা রয়েছে। ১৩ বছর ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা লাভরভ সংবাদ সম্মেলনে সহজে কোনো প্রশ্ন এড়িয়ে যান না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের আগে তিনি ১০ বছর জাতিসংঘে রুশ রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন। উষ্ণ কূটনৈতিক আচরণের ক্ষেত্রে পুতিনের কিছুটা ঘাটতি থাকলেও নিজেকে উপস্থাপন ও প্রতিপক্ষের জন্য ফাঁদ নির্মাণের কৌশল তিনি ভালোভাবেই জানেন। আর তিনি ঠিক এ কাজটিই করেছেন। ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে তিনি একটি ফাঁদ পেতেছেন।

বৈঠকের আগে রাশিয়া তাদের আলোচ্যসূচি প্রকাশ করে। তাদের আলোচ্যসূচিতে প্রথমেই স্থান পায় জনসমক্ষে দুই পক্ষের সম্পর্ক নবায়নের বিষয়টি। এর পরেই রয়েছে আমেরিকার নীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেওয়া ও সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে উভয় পক্ষের অবস্থান নিয়ে আলোচনা। বৈঠকে তারা এ তিন বিষয়েই আলোচনা করতে সক্ষম হয়। আলোচ্যসূচি সম্পর্কে তাদের এ আগাম ঘোষণা প্রত্যাশাকে বাড়তে দেয়নি। একই সঙ্গে তারা আগে থেকেই মার্কিন পক্ষকে জানিয়ে রেখেছে যে, ইউক্রেন-বিষয়ক আলোচনার জন্য তাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় নেই।

এর বিপরীতে এ যাবৎকালের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ কূটনৈতিক বৈঠকের আগে আমেরিকার প্রস্তুতি কী ছিল? আলোচ্যসূচি নির্ধারণেই বা তারা কী করেছে? বৈঠকের আগের দিন বিদেশের (পোল্যান্ড) মাটিতে দাঁড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাকে। একই সঙ্গে মার্কিন নির্বাচনে (রাশিয়ার সঙ্গে) অন্য কোনো দেশ কিংবা গোষ্ঠী জড়িত কিনা সে প্রশ্নও উত্থাপন করেন তিনি। আর এর আগেই পুতিনের সঙ্গে আসন্ন বৈঠকে আমেরিকার লক্ষ্য সম্পর্কে খোলাসা করে দেন প্রেসিডেন্টের জাতীয় নিরাপত্তা-বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ আর ম্যাকমাস্টার। তিনি বলেন, কোনো সুনির্দিষ্ট আলোচ্যসূচি নেই। বৈঠকে প্রেসিডেন্ট যা আলোচনা করতে চাইবেন, তাই করবেন।

সমস্যা হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক বৈঠকের আগে লক্ষ্য ও সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি সম্পর্কে আগে থেকে অবহিতকরণের বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে স্থান সংকুলানের চেয়ে অন্য অনেক কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিপক্ষীয় কোনো আলোচনায় কোনো একটি দেশের লক্ষ্য, তা অর্জনে তার প্রস্তুতির বিষয়টি ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে স্পষ্ট করা হয়, যা অন্য পক্ষকে কিছুটা চাপে রাখে।

জন কেরি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে প্রায় প্রতিটি কূটনৈতিক সফরের আগে এ সম্পর্কে ব্রিফিং করেছেন। কূটনৈতিক বিভিন্ন বৈঠকের আগে বিমানের ভেতরে, গভীর রাতে কিংবা ভোরে, এমনকি অ্যান্ড্রুজ বিমানঘাঁটিতেও বিশেষ ব্রিফিং করেছেন জন কেরি। আপাতদৃষ্টে সেসব ব্রিফিং সংবাদমাধ্যমের চাহিদার প্রতিফলন মনে হলেও, তা ছিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিজের প্রয়োজনেই। কারণ এসব ব্রিফিং বৈঠকের আগেই নিজ অবস্থান স্পষ্ট করতে সহায়তা করেছে আমেরিকাকে। অথচ রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রথম বৈঠকের আগে এমন কোনো প্রস্তুতিই আমেরিকার ছিল না।

ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের অব্যবহিত পরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন ক্যামেরার সামনে উপস্থিত হয়ে জানান যে, বৈঠকে নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের প্রসঙ্গটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গুরুত্বের সঙ্গে কয়েকবার উত্থাপন করেছেন। এটি ততক্ষণ পর্যন্ত মার্কিনিদের আশ্বস্ত করে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি বলেন, ‘কোনো বিষয়ে অনিয়ন্ত্রণযোগ্য মতানৈক্যের একটি বিন্দুর বদলে বৈঠকে আমাদের আগামীর পথচলার ওপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।’এর পরপরই সামনে আসে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বক্তব্য। ক্যামেরার সামনে দেওয়া ওই বক্তব্যে লাভরভ বলেন, (মার্কিন নির্বাচনে) কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। আর নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ সম্পর্কিত প্রতিবেদনগুলোকে ‘অতিরঞ্জিত’ আখ্যা দিয়েছেন ট্রাম্প। একই সঙ্গে পুতিনের এ-সম্পর্কিত বক্তব্যকেও তিনি মেনে নিয়েছেন।

মার্কিন শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা, কংগ্রেসে থাকা ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান পার্টির সদস্য, এমনকি ট্রাম্প প্রশাসনের অনেকেই আত্মবিশ্বাসী যে, গত বছর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়া হস্তক্ষেপ করেছিল। অথচ তা অস্বীকার করে প্রেসিডেন্ট পুতিনের দেওয়া একটি ছোট আশ্বাসই একে এক লহমায় সব উড়িয়ে দিল।

কূটনীতিতে প্রতিপক্ষকে চাপ প্রয়োগের জন্য কারও হাতে অজস্র অস্ত্র থাকে না। আর বিপক্ষকে কোনো একটি বিষয়ে একবার দায়মুক্তি দিলে, সে বিষয়ে তার ওপর আর চাপ প্রয়োগ করা যায় না। দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে বৈঠক বিষয়ে যে তথ্য সবার সামনে এল, তাতে অন্তত রুশ জনগণের সামনে এ বিষয়টির নিষ্পত্তি হয়ে গেছে বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। এটি মার্কিন গণতন্ত্রে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে প্রশাসনিক স্তরে বিশৃঙ্খলা ও সংশয় সৃষ্টির পথ রাশিয়ার জন্য আরও সহজ করে তুলতে পারে। আর সামনে এ ধরনের বিস্তর সুযোগও রয়েছে।

চলতি বছরের নভেম্বরেই দুটি গভর্নর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে আরও ৩৬টি নির্বাচন, যার মধ্যে ৩৪টিই সিনেট আসনের। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকার ২১টি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল সিস্টেম রাশিয়া হ্যাক করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

এমন এক পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় কিছুটা সুবিধামূলক অবস্থানে থাকার স্বার্থে হলেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের কর্তব্য ছিল, নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে এ যাবৎ পাওয়া প্রমাণাদি উপস্থাপন করা। একই সঙ্গে এও জানিয়ে দেওয়া যে, এ বিষয়ে তিনি ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান নির্বিশেষে শীর্ষস্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গেই আছেন। অথচ পুতিনের আশ্বাসে ভুলে তিনি এর কোনোটিই না করে মুখে বিস্তৃত হাসি টেনে ফটোসেশন করলেন। আর এ সৌহার্দ্যপূর্ণ ছবিগুলো রাশিয়া কালক্ষেপণ না করেই ছড়িয়ে দিল ইন্টারনেটে-যা প্রমাণ হিসেবে রাশিয়ার পক্ষেই দাঁড়ায় শেষ পর্যন্ত।

(সিএনএন-এ প্রকাশিত সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেনিফার রিনি সাকির নিবন্ধ অবলম্বনে)

ক্রিকেট

এই মাত্র পাওয়া: চমক দিয়ে তামিমকে অধিনায়ক করে ১৪ সদস্যের দল ঘোষণা করলো বিসিবি

এই মাত্র পাওয়া: চমক দিয়ে তামিমকে অধিনায়ক করে ১৪ সদস্যের দল ঘোষণা করলো বিসিবি

ক্রিকেটে আবারও বড় মঞ্চে নামছে বাংলাদেশের যুব দল। সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হতে যাচ্ছে অনূর্ধ্ব-১৯ ...

জ্বলে উঠেছেন তাসকিন, 2 উইকেট তুলে নিলো বাংলাদেশ,সর্বশেষ স্কোর

জ্বলে উঠেছেন তাসকিন, 2 উইকেট তুলে নিলো বাংলাদেশ,সর্বশেষ স্কোর

মিডল-লেগ স্টাম্পে করা তাসকিনের বলে ফ্লিক করতে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দিলেন কেচি কার্টি। রানের ...

ফুটবল

পয়েন্ট টেবিল প্রকাশ : ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে আরও যত পয়েন্ট দরকার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার

পয়েন্ট টেবিল প্রকাশ : ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে আরও যত পয়েন্ট দরকার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার

২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক ফুটবল সূচির প্রায় শেষ প্রান্তে এসে নিজেদের বছরের শেষ ম্যাচ খেলেছে দক্ষিণ ...

২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা পেতে আরও যত পয়েন্ট দরকার আর্জেন্টিনার

২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা পেতে আরও যত পয়েন্ট দরকার আর্জেন্টিনার

লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে আর্জেন্টিনা। পেরুর বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে ২৫ ...



রে