উন্নয়নের মহাসড়কে সুইস ব্যাংক

ইংরেজি ক্যাপিটাল শব্দটি নানা অর্থেই ব্যবহৃত হয়। দেশ বা প্রদেশের রাজধানী। ইংরেজিতে বড় হাতের বর্ণ অর্থেও এটি ব্যবহার করা হয়। ক্যাপিটালের আরেকটি অর্থ পুঁজি বা মূলধন। দেশের রাজধানী এক জায়গায় থাকলেও মূলধন বা পুঁজি তা থাকে না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, এক দেশ থেকে আরেক দেশে স্থানান্তরিত হয়। এটি বৈধভাবে হলে বলি বিদেশি বিনিয়োগ। অবৈধভাবে হলে পাচার।
বাংলাদেশে ধনীরা পারলে হয়তো স্থানিক ক্যাপিটাল বা রাজধানীটাই অন্য কোথাও নিয়ে যেতেন। সেটি যখন সম্ভব হচ্ছে না, তখন স্থানান্তরণযোগ্য ক্যাপিটাল বা পুঁজি বিদেশে নিয়ে যাচ্ছেন। যাঁর টাকা যেখানে খুশি রাখবেন, আমাদের কী বলার আছে? একদিকে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমানো টাকার পরিমাণ বাড়ছে, অন্যদিকে একশ্রেণির মানুষ বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ছোবড়া করে ফেলেছেন। এই দুইয়ের মধ্যে কোনো যোগসূত্র আছে কি না, সেটা ভাবার বিষয়। আর কেবল সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের অর্থই বাড়ছে না, অনেকে যে কানাডা, মালয়েশিয়ায়, দুবাই, আবুধাবি, সিঙ্গাপুরে সেকেন্ড হোম বানাচ্ছেন, সে টাকাইবা তাঁরা কোথায় পাচ্ছেন।
২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে জমা হওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ১০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকায় (বাংলাদেশি মুদ্রায় এক সুইস ফ্রাঁর বিনিময়মূল্য ৮৬ টাকা)। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে জমার পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৫ কোটি সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আগের বছরের চেয়ে এ জমার পরিমাণ প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বা ২০ শতাংশ বেড়েছে।
সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (এসএনবি) গত বৃহস্পতিবার ‘ব্যাংকস ইন সুইজারল্যান্ড ২০১৬’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এসএনবির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে সুইজারল্যান্ডে মোট ব্যাংকের সংখ্যা ছিল ২৬১। এ ২৬১টি ব্যাংকেই বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব থেকে অর্থ জমা রাখা হয়।
এসএনবির প্রকাশিত প্রতিবেদনে ২০০৭ সাল থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থ জমার তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১২ সাল থেকে সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশ থেকে অর্থ জমার পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ২০১২ সালে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের জমা অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ কোটি ৮০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৯৬১ কোটি টাকা। ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল—এই সময়ের মধ্যে সুইস ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের জমা রাখা অর্থের পরিমাণও তিন গুণ বেড়ে গেছে।
তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলোয় অর্থ জমার পরিমাণ ২০১৬ সালে এসে আগের বছরের চেয়ে প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকগুলোয় ভারতের জমার পরিমাণ ছিল প্রায় ১২১ কোটি সুইস ফ্রাঁ, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১০ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এসে ভারতের জমার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৬৬ কোটি ৪০ লাখ সুইস ফ্রাঁ, বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। আবার ২০০৯ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমার পরিমাণ ছিল ১৪ কোটি ৯০ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা ১ হাজার ২৮১ কোটি টাকা, আর এখন তা ৩৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৫ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা।
এর দুটি কারণ হতে পারে। এক. আমাদের ধনবান ব্যক্তিরা বাংলাদেশের ব্যাংকে টাকা রাখা নিরাপদ বোধ করছেন না। এখানে টাকা রাখলে অর্থমন্ত্রী যেভাবে আবগারি শুল্ক বসানোর কথা ভাবেন, সেটি হয়তো তাঁদের মাথায় বাজ ফেলে দেয়। দুই. যে উপায়ে তাঁরা টাকা উপার্জন করেছেন, সেটি দেশের মানুষকে জানাতে সংকোচ বোধ করছেন বলে তাঁরা সুইস ব্যাংকে টাকা জমা রাখাকে অনেক বেশি নিরাপদ মনে করছেন। অর্থাৎ যে অর্থ বৈধ পথে অর্জিত হয়নি, সেটি বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এভাবে ধনবানেরা প্রথমে টাকা পাঠান, তারপর পরিবারের সদস্যদের পাঠান এবং সবশেষে নিজেদের পাচার করেন। দ্বৈত নাগরিকত্ব নেন। যেসব দেশে সেই সুযোগ নেই, সেসব দেশে মাননীয় সিআইপি হয়ে থাকেন।
পৃথিবীর দুই শ্রেণির মানুষের দেশ নেই। যাঁরা একেবারে নিঃস্ব আর যাঁরা বিপুল অর্থের মালিক। প্রথম শ্রেণির মানুষ নিজ দেশেও পরবাসী, আর দ্বিতীয় শ্রেণির মানুষ যেখানেই যান, সেটাই তাঁদের দেশ।
প্রশ্ন হলো, দেশ থেকে এই যে বিপুল পরিমাণ টাকা বা সম্পদ বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে, সেটি বন্ধ করতে সরকার কী করছে। আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপি আমলে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত এনেছে বলে কৃতিত্ব দাবি করে। কিন্তু গত সাড়ে আট বছরে দেশ থেকে যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হলো, সেগুলো ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তারা কী পদক্ষেপ নিয়েছে? অর্থমন্ত্রী নিজেও পাচারকে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করে এটি বন্ধে পদক্ষেপ নেবেন বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছেন, সেল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন, এত দিন কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না। ভারত অর্থ পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ অর্ধকে নামিয়ে এনেছে। আর আমাদের এখানে উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। অনিয়ম বন্ধ করা না গেলে তা আরও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। বিনিয়োগ পরিবেশের ঘাটতি ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণে দেশ থেকে বিদেশে অর্থ নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহা. রাজী হাসান যুক্তি দেখিয়েছেন, ‘সুইস ব্যাংকগুলোয় অর্থ জমার যে পরিমাণ বলা হচ্ছে, তা পুরোটাই বাংলাদেশ থেকে যায়নি।’ তার মানে পুরোটা বাংলাদেশ থেকে না গেলেও বেশির ভাগটা গেছে। সেটি কেন তাঁরা বন্ধ করতে পারলেন না?
অথচ কালোটাকা ও অর্থ পাচার রোধে ২০১৬ সালে ভারত সুইস ব্যাংকগুলোর সঙ্গে তথ্য বিনিময়ের উদ্যোগ নিয়েছে। এর আওতায় ২০১৯ সাল থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সুইস ব্যাংকগুলো থেকে ভারতীয় গ্রাহকদের তথ্য পেতে যাচ্ছে দেশটির সরকার। ভারতের এ ধরনের উদ্যোগের ফলে দেশটি থেকে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ কমে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
অনেক ক্ষেত্রেই আমরা ভারতের উদাহরণ দিই। কিন্তু এই ক্ষেত্রে পাকিস্তানকেই অনুসরণ করছি। বিভিন্ন দেশ থেকে সুইস ব্যাংকে অর্থ জমার পরিমাণ কমতে থাকলেও যে গুটি কয়েক দেশ থেকে অর্থ যাওয়া বেড়েছে, সেগুলোর মধ্যে পাকিস্তানই শীর্ষে। অন্যান্য ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের বৈরিতা থাকলেও এখানে আশ্চর্য মিল। আগের বছর বাংলাদেশিদের অর্থ জমার পরিমাণ বেড়েছিল ১০ শতাংশ। আর সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল ২০১৩ সালে, ৬২ শতাংশ।
অন্য ক্ষেত্রে আমাদের যতই ঘাটতি থাকুক না কেন, এ ক্ষেত্রে আমরা ‘উন্নয়নের মহাসড়কেই’ আছি।
- আইপিএল ২০২৫: এমন চমক কেউ কল্পনাও করেনি, সূচি, দল ও নতুন নিয়মে অবাক সবাই
- বেড়ে গেলো সৌদি রিয়াল রেট,দেখেনিন আজকের রেট কত
- এক লাফে লিটারে যত কমলো সয়াবিন তেলের দাম
- শেখ হাসিনা পরিবারের কয়েক,শ কোটি টাকা ফ্রিজ! দেখে নিন কার অ্যাকাউন্টে কত টাকা ছিলো
- কঠোর হচ্ছে সরকার, ‘অল আউট অ্যাকশনে’ যাচ্ছে ডিবি
- বেড়ে গেলো সৌদি রিয়াল রেট,দেখেনিন আজকের রেট কত
- বেড়ে গেলো সিঙ্গাপুরের ডলার রেট,দেখেনিন আজকের রেট
- সৌদি আরবে ৩ মাসের আকামা সহ ফ্রি ভিসার সুযোগ
- ক্রিকেট ইতিহাসে এই প্রথম যে ইতিহাসের সাক্ষী হচ্ছে বাংলাদেশ
- চরম ব্যর্থতার পর বিসিবির চাওয়াতে বাংলাদেশ দলের কোচ হচ্ছেন আশরাফুল
- পদযাত্রায় পুলিশের বাধা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি
- মাগুরার ধর্ষণের শিকার শিশুর অবস্থা সংকটাপন্ন, দুবার হার্ট অ্যাটাক
- মালয়েশিয়ান রিংগিতের সর্বশেষ বিনিময় হার - ১০ মার্চ ২০২৫
- ৬,৬,৬,৬, ব্যাটিং ঝড়ে সেঞ্চুরি করলেন তামিম
- সরকারি ৩ দপ্তরের শীর্ষ পদে রদবদল: নতুন নিয়োগ ও দায়িত্ব ভাগাভাগি