ক্ষমা মহৎ গুণ, কিন্তু কাদের জন্য?
অনেকে অবশ্য ‘এই সামান্য টাকা’ নিয়ে সাজা প্রদানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। বর্তমান সরকারের আমলে সংঘটিত বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগকে এই ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে ঘোল পাকিয়েছেন অনেকে। অনেকে আবার খালেদা জিয়ার দুর্নীতির সঙ্গে শেয়ারবাজার-ব্যাংকিংখাতের লুটপাটকে মেলানোটা এক ধরনের ‘মতলববাজি’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাদের মতে, খালেদার দুর্নীতিকে লঘু করে দেখা, এই দুর্নীতির সঙ্গে অন্য কোনো ইস্যুকে মিলিয়ে ফেললে সেটা হবে চরম ভুল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে হলে খালেদা জিয়ার দুর্নীতি নিয়ে পরিষ্কারভাবে কথা বলা উচিত।
দেশের একজন শীর্ষনেত্রী দুর্নীতিবাজ হলে সেটি দেশের লজ্জা। বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। একবার না- দুইবার। তিনি দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান, যিনি আবারো প্রধানমন্ত্রী হতে চান। বেগম খালেদা জিয়া যদি ১ টাকার দুর্নীতি করেন- সেটি হাজার কোটি, লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতির চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। অনেকের মুখে এমন কথাও শোনা গেছে যে, এই সামান্য কটি টাকার জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে দণ্ড দেওয়াটা ঠিক হয়নি। তাকে ক্ষমা করা যেত।
ক্ষমা পরম ধর্ম। এবং ক্ষমা এক রকম চর্চা। মহৎ মানবিকতার পক্ষে ক্ষমার চেয়ে বৃহৎ ও সুন্দর আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু জনগণমনলোকে ক্ষমাশীলতার চেতনা উৎসারিত না হলে তা কেবল কতিপয়ের আকাঙ্ক্ষা এবং শুভমানসের পরিচয় হয়ে দাঁড়ায়। আর প্রশ্ন শুধ দণ্ড নিয়েই নয়, মৃত্যুদণ্ড নিয়েও আছে। কারও ফাঁসির আদেশ হলে, সেই আদেশ কার্যকর করার ব্যবস্থা হলে, বিবিধ প্রশ্নের ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে সামাজিক পরিসরে। বলা হয়, কারও বেঁচে থাকার অধিকার কেউ হরণ করতে পারে না। জঘন্য অপরাধীরও সেই অধিকার আছে। ঠিকই। কিন্তু কাকে বলে বেঁচে থাকা? জীবন কাকে বলে? সংশোধনের নামে জেলখানার খুপরি ঘরে ঘুলঘুলির ছোট্ট আলোর টুকরো নিয়ে কাটানো, শুধু খাওয়া-পরা আর শরীর টিকিয়ে রাখার যে জীবন, তা কি ‘জীবন’ আদৌ? তা কি কোনও অপরাধী ব্যক্তির প্রতি ক্ষমাশীল পৃথিবীর মানবিক ব্যবহার? একবারে মেরো না, অল্পে অল্পে মরুক। জিইয়ে রাখো। ক্ষমাশীলতার উদার নৈতিকতা চমৎকার প্রদর্শন করা যাবে।
বলা হয়, প্রাণদণ্ড মানুষের জীবনের প্রতি অমানবিক হস্তক্ষেপ। প্রতিটি দণ্ডই কি তা নয়? দণ্ড মানেই তো কিছু অনভিপ্রেত বিধিব্যবস্থার মধ্যে দণ্ডিতকে ঠেলে দেওয়া। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত অনেক অপরাধী বলেছেন, এ ভাবে কুঠরিবন্দি বেঁচে থাকার চেয়ে তাঁরা বরং মৃত্যুদণ্ডই বেছে নিতে চান।
আসল কথা, শেষ পর্যন্ত সেই সমাজই নির্ণয় করে দেয় কে কী রকম ভাবে বেঁচে থাকবে। বা আদৌ থাকবে কি না। এখানেই একটা মৃত্যুর সঙ্গে আর একটি মৃত্যুকে সোজাসাপটা ভাবে তুলে ধরা হয়। কিন্তু মৃত্যু সংঘটন মাত্র নয়। কারণের নিরিখে প্রত্যেকটি মৃত্যুর গুরুত্ব আলাদা। ঔচিত্য-অনৌচিত্য পৃথক। মৃত্যুদণ্ড সেই ঔচিত্য নির্ণয় করে কোনও সমাজের প্রণীত আইনের পরিকাঠামোয়। ‘পরিকাঠামো’ শব্দটার মাত্রা এ ক্ষেত্রে অতি উচ্চ মানের। যে সমাজ আইন সংগত দণ্ড হিসেবে মৃত্যু নির্ণয় করার বিধি রাখে, সে সমাজ থেকে মৃত্যুদণ্ড তুলে দিলেই কি সমাজ আর বর্বরোচিত থাকবে না? অমলিন হয়ে উঠবে? সভ্য সমাজের মূল লক্ষণ দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন প্রশাসন, ন্যায়পরায়ণতা, সমদর্শিতা, জাতিবর্ণবিদ্বেষহীনতা, নারীপুরুষের সাম্য, ধনীদরিদ্রের মধ্যে ভারসাম্য রচনা এবং দুর্নীতিমুক্তি। এগুলি সমাজের মান নির্ণয় করে। এগুলি অপরাধ প্রতিষেধক। এগুলি প্রতিষ্ঠিত না হলে, মৃত্যুদণ্ড বিলোপ হলেও, রাজনীতি অবশিষ্ট আইনগুলির ফসল তুলবে। নিরপরাধ ব্যক্তিকে সংশোধনের নামে আইনসংগত ভাবে ফাঁসানো হবে।
যত দিন হিংসা ও দুর্নীতি থাকবে, তত দিন মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবেই। যদি মৃত্যুদণ্ড না থাকে, যদি যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত কোনও ব্যক্তি কুড়ি বছর পর নিরপরাধ প্রমাণিত হয়, তার জীবনের আর কিছুই কি বাকি থাকে? কুড়ি বছর ধরে যে মর্মবেদনা, যে অপমানের শিকার সে, তার জন্য সমাজকে কোন সংশোধনাগারে পাঠানো হবে? বিচারব্যবস্থায় ‘সময়’ অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। অপরাধ ঘটানোর অব্যবহিত পরে দ্রুত সাক্ষ্যপ্রমাণ পেশ করতে গেলে ভ্রান্তি থাকতে পারে, আবার ঘটনার দু’যুগ পরে দণ্ডবিধান করলে বিচারের যাথার্থ্য নিয়ে সংশয় উপস্থিত হয়, কারণ, ওই সুদীর্ঘ সময়, অপরাধের ভয়াবহতা ও ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপকতা ফিকে করে দেয়।
প্রাণভিক্ষাই মানবজীবনের চরম প্রাপ্তি নয়। তার পরেও কিছু থাকে। থাকে স্বাধীনতা, সম্মান। সেই সব হরণ করাও তো বর্বরতাই। বহু অপরাধী স্বকৃত অপরাধের ভার বহন করতে না পেরে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তাঁদের সেই আত্মদহন কি তাঁদের সংশোধিত চিত্তকে মানবাধিকারবাদীদের সম্মতিক্রমিক দণ্ড থেকে রেহাই দেয়?
অপরাধীর মনস্তত্ত্ব বহুদূরবিসারী এবং জটিল। প্রত্যেকটি মানুষই সংশোধনযোগ্য এটা বিশ্বাস হিসেবে আনন্দদায়ক কিন্তু বৈজ্ঞানিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত নয়। প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ নরহত্যার মতো অপরাধ মোটামুটি দু’ধরনের ঘটে। এক, আকস্মিক ভাবে কোনও আবেগবশে; অপরটি সুপরিকল্পিত ভাবে। সুপরিকল্পিত হত্যার মধ্যেও আবেগতাড়িত হত্যা থাকতে পারে, আবার স্রেফ সন্ত্রাস সৃষ্টি, স্রেফ ক্ষমতায়ন কিংবা আত্মঘোষণা— আতঙ্কবাদীরা যে পথ নেয়। অথবা মানসিক বিকারগ্রস্ত সিরিয়াল কিলার। এবং, অবশ্যই, যে আবেগ, যে ব্যক্তিস্বার্থ, যে ধর্মবিশ্বাস, যে রাজনৈতিক ক্ষমতালোভ নির্বিচারে হত্যা করে তার প্রত্যেকটি বিকৃতি, গভীর অসুখ, সমাজের পচন।
শরীরের কোনও অঙ্গে পচন ধরলে চিকিৎসক প্রথমে তা সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। অর্থাৎ সংশোধনের প্রয়াস। সেই প্রয়াস সফল না হলে, শরীরের স্বার্থেই, সেই অঙ্গ কর্তন করা হয়। এটা প্রতিহিংসা নয়, দুঃখের হলেও, আপাতনিষ্ঠুর হলেও এই পথ অবলম্বন করতে হয়। যে মৃত্যু বহু জীবন বিনাশের সম্ভাবনা হ্রাস করে, তার প্রতিপাদন তিক্ত, কিন্তু মাঙ্গলিক।
একজন ব্যক্তি কেন অপরাধী হয়ে ওঠে, তার সহস্র কারণ আছে। এমনকী, অপরাধপ্রবণতা জিনজনিতও হতে পারে। সেইখানে অপরাধ আর সংশোধনযোগ্য আচরণ থাকে না, অপরাধপ্রবণ মানসিকতা হয়ে দাঁড়ায়। তবু, মানতেই হয়, সমাজের দায় আছে, রাষ্ট্রের দায় আছে প্রতিটি মানুষের জীবন সুরক্ষিত করার। কিন্তু জীবন বলতে কী বোঝায়?
দুর্নীতিবিচারব্যবস্থা বা দণ্ডবিধান প্রক্রিয়া প্রতিহিংস্র আবেগনিরপেক্ষ। ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কেউ প্রতিহিংসা জয় করতে পারেন। হিংস্রতা থেকে উত্তরণের পথেই মানবসভ্যতার জয়যাত্রা। কিন্তু আমরা সব ক্ষেত্রে তা আশা করতে পারি না। এমনকী আশা করা অন্যায় যখন ধর্ষণের মতো অমানুষিক অত্যাচার ঘটে। যখন একজন সাবালক পুরুষ পাঁচ বা ছয় বছরের একজন শিশুকে ধর্ষণ করে সেই ধর্ষককে কত দূর ক্ষমা করা সম্ভব? কিংবা যারা চাপাতি দিয়ে জবাই করে হত্যা করেছে দেশের মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারীদের, তাদের কী ক্ষমা করা সম্ভব? কোনও কোনও নিষ্ঠুরতা মৃত্যু কামনা করতে শেখায়, এ কথা ক্ষমা ও মানবিকতার পরিপন্থী হলেও, সততার সঙ্গে স্বীকার করা ভালো। মানসিকতার সৎ প্রতিফলনই হৃদয় পরিবর্তনের সহায়ক।
ক্ষমার চেয়ে বড় কিছু নেই। সুন্দর কিছু নেই। ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে তার অসীম ক্ষমতা। কিন্তু যখন সমষ্টির প্রশ্ন, সমাজের সংকট, সেখানে ক্ষমাও স্বার্থ চরিতার্থতার হাতিয়ার হতে পারে। দুর্বলতা হতে পারে। এমনকী, সমষ্টির স্বার্থে কোনও ব্যক্তি হত্যাকারী চিহ্নিত হবেন কিনা তা নির্ভর করে ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতের উপর। দেশরক্ষার্থে প্রাণহরণকারী সেনানী, স্বাধীনতাকামী বিপ্লবীইতিহাস তাঁদের বীর বলে। সমাজ তাঁদের মাল্যবিভূষিত করে।
যে দিন পৃথিবীতে লুটপাট হিংসা দুর্নীতি থাকবে না, ধর্ষণ থাকবে না, আগ্রাসন থাকবে না, এমনকী দেশরক্ষার্থেও অস্ত্রনির্মাণ প্রয়োজন হবে না, ‘গোলাপের তোড়া হাতে কুচকাওয়াজ’, সেই দিন আর কারও কারাদণ্ড কিংবা মৃত্যুদণ্ড কামনা করতে হবে না, মানবহৃদয়ের সেই শুভসংস্থানের সার্বিক জয় হোক।
সুত্র;চ্যানেল আই
- চরম দু:সংবাদ: দেশ জুড়ে নেমে এলো শোকের কালো ছায়া মারা গেলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক
- আইপিএল নিলামে ঝড় তুলে বিশাল পারিশ্রমিকে দল পেলেন নাহিদ রানা
- ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয়ের পথে বাংলাদেশ
- আইপিএল নিলামে দল পেল মুস্তাফিজের দুই সতীর্থ, দেখেনিন সাকিবের অবস্থান
- ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত চার দলের, বাদ পড়তে পারে ব্রাজিল, দেখেনিন আর্জেন্টিনার অবস্থান
- এইমাত্র শেষ হলো বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচের প্রথম দিনের খেলা, দেখেনিন সর্বশেষ ফলাফল
- IPL নিলাম ২০২৫: মুস্তাফিজ বাদ ধোনির চাওয়াতেই রেকর্ড মুল্যে আইপিএলে দল পেলেন সাকিব
- ব্রেকিং নিউজ : IPL নিলাম: সাকিব মুস্তাফিজ নয় ইতিহাস গড়ে রেকর্ড বিডে যে দলে রিশাদ হোসেন
- ২০২৫ IPL নিলামে চমক দেখিয়ে রেকর্ড দামে দল পেলেন সাকিব
- 2025 IPL নিলাম: চেন্নাইয়ে সাকিব ও মুস্তাফিজ, কলকাতায় তাসকিন, দেখেনিন নাহিদ রানা যে দলে
- আইপিএল নিলামে ইতিহাস গড়ে ৪কোটি রুপিতে যে দলে মুস্তাফিজ
- মাত্র ৪৩ রানে অলআউট : বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ
- টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, দেখেনিন সর্বশেষ স্কোর
- 2025 IPL নিলাম: আকাশ ছোয়া মূল্যে দল পেলেন লিটনের সতীর্থ, দেখেনিন সাকিব মুস্তাফিজের অবস্থান
- ব্রেকিং নিউজ : যে কারণে বাংলাদেশের ৮ ক্রিকেটারকে নি*ষি*দ্ধ করল বিসিবি