পথে পথে সংঘর্ষ টিয়ার শেল
দিনভর রায় ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশেই ছিল টানটান উত্তেজনা। জনমনেও ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিল পুলিশ-র্যাব ও বিজিবি।
সকাল থেকেই ঢাকা ছিল কার্যত ফাঁকা। এমন পরিস্থিতিতে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে গুলশান ২ নম্বরের ৭৯ নম্বর রোডের ফিরোজা ভবন থেকে বকশীবাজারে আদালতের উদ্দেশে রওনা হন খালেদা জিয়া। এর আগে তার বাসায় উপস্থিত হন তার ভাইবোন, ভাগ্নে ও অন্যান্য স্বজন।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সামনে-পেছনে ছিল কয়েক স্তরের পুলিশ বেষ্টনী। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে গাড়িবহর তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা এলাকা অতিক্রম করার সময় অপেক্ষমাণ কয়েকশ' নেতাকর্মী যুক্ত হন তার সঙ্গে। আরও কয়েকটি এলাকা থেকে দফায় দফায় নেতাকর্মীরা যুক্ত হন বহরে।
মগবাজার থেকে চানখাঁরপুল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে থাকা বিএনপি নেতাকর্মী, পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে দফায় দফায়। এতে সাত পুলিশ সদস্য আহত হন। আহত হয়েছেন বিএনপির ১৫-২০ নেতাকর্মীও। বিএনপির নেতাকর্মীকে ছত্রভঙ্গ করতে কাকরাইল ও চানখাঁরপুল এলাকায় টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ চলাকালে দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ ও কাকরাইল মসজিদের সামনে নবনির্মিত একটি পুলিশ বক্সে ভাংচুর করে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মগবাজার মোড়ে পৌঁছায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। সেখানে আগে থেকে জড়ো হওয়া সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা স্লোগান দিয়ে মিছিলকারীদের দিকে এগোনোর চেষ্টা করলে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। গাড়িবহর থামিয়ে এ সময় প্রায় ১০ মিনিট মগবাজার এলাকায় অবস্থান করেন খালেদা জিয়া। হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনের সড়কে গাড়িবহর পৌঁছালে রাস্তার পাশে অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগ সমর্থক ও খালেদা জিয়ার বহরের বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। তখন সড়ক বিভাজকের ওপর থাকা কয়েকটি গাছ ভেঙে ফেলে বিএনপির কর্মীরা। দুপুর ১২টা ৩৫ মিনিটের দিকে মিছিল নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা রমনা থানার মোড়ে এসে থামে। ওই এলাকায় আবারও পুলিশি ব্যারিকেড ও রাস্তায় বসানো ট্রাফিক পুলিশের বিভিন্ন সরঞ্জাম ভাংচুর করা হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেলও ছোড়ে তারা।
মিছিলটি মিন্টো রোডের কাছাকাছি যাওয়ার পর সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা মিছিলের ওপর হামলা চালানোর চেষ্টা চালায়। ইট ও লাঠি ছুড়তে থাকে তারা। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা ধাওয়া করে তাদের। সরকারদলীয় ও বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে অনেকের হাতে ছিল লাঠিসোটা।
খালেদার গাড়িবহর নিয়ে মিছিলকারীরা কাকরাইল চার্চ মোড়ে এলে ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে থাকে পুলিশ। তারাও পাল্টা ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় মোড়ে দুটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ, একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর ও কাকরাইল মসজিদের সামনে নবনির্মিত ট্রাফিক পুলিশ বক্স ভাংচুর করে বিএনপির সমর্থকরা। মিছিলকারীদের ছোড়া ইটের আঘাতে আহত হন দুই পুলিশ সদস্য।
খালেদা জিয়ার বহর হাইকোর্ট এলাকার সামনের সড়কে পৌঁছালে অপেক্ষমাণ কয়েকশ' নেতাকর্মী তার সঙ্গে যুক্ত হয়। হাইকোর্টের মাজার গেটের সামনে বহর পৌঁছালে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা গাড়িবহরে অংশ নিলে বাধা দেয় পুলিশ। মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছোড়া হয় পুলিশের ওপর। বিএনপির দুই নারী কর্মীকে আটক করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের কাছ থেকে তাদের ছিনিয়ে নেয় নেতাকর্মীরা।
খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সঙ্গে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের দুপুর দেড়টার দিকে চানখাঁরপুল মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ। তাকে বহনকারী গাড়ি আদালতের দিকে চলে গেলে প্রায় ২০ মিনিট সেখানে অবস্থান করে স্লোগান দেয় কয়েকশ' নেতাকর্মী। ফের পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে তাদের। তিনটি মোটরসাইকেল ভাংচুর চালায় তারা। একপর্যায়ে তাদের ধাওয়া করে পুলিশ। এ সময় মহিলা দলের কয়েকজন নেত্রীসহ অন্তত ১৫ জনকে আটক করে পুলিশ।
গুলশানের বাসা থেকে বের হওয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর গাড়িবহর চানখাঁরপুল হয়ে বকশীবাজার মোড় অতিক্রম করে। তখনই পুলিশ ও র্যাব সদস্যরা তার বহরের গাড়ি ঘিরে ফেলে। এমনিভাবে খালেদা জিয়াকে পৌঁছে দেওয়া হয় আদালতের এজলাস পর্যন্ত।
দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে আদালতে বিচারকের ডায়াসের কাছের একটি চেয়ারে বসেন খালেদা জিয়া। বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নজরুল ইসলাম খান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন ওই সময়। আড়াইটার দিকে রায় ঘোষণা হয়। এরপর ৩টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে বকশীবাজারে বিশেষ আদালত অদূরে নাজিমুদ্দিন রোডের পুরনো কারাগারে নেওয়া হয় খালেদা জিয়াকে।
আদালতের বাইরের দৃশ্যপট :পুরো আদালত অঙ্গন ঘিরে পুলিশ-র্যাবের কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় গড়ে তোলা হয়। পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতাও চলতে থাকে। র্যাব-পুলিশের গাড়ি টহল দেয় পুরো এলাকায়। র্যাব মহাপরিচালক ও ডিএমপি কমিশনারকে মাঠে সশরীরে উপস্থিত থেকে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার নিরাপত্তা কার্যক্রম তদারক করতে দেখা যায়। তবে রায় ঘোষণার পর বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা গ্রেফতার এড়াতে আদালত এলাকা থেকে বেরিয়ে সংবাদকর্মীদের মোটরসাইকেলে হেলমেট পরে পালিয়ে যান।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বকশীবাজারে সাংবাদিকদের বলেন, 'সাইবার ওয়ার্ল্ডে সাইবার ক্রিমিনালরা গুজব ও অপপ্রচারের চেষ্টা করছে। র্যাব সতর্ক রয়েছে।'
ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া আদালত এলাকার নিরাপত্তা চিত্র পরিদর্শন করার সময় সাংবাদিকদের বলেন, 'নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য তারা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছেন। কারও কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সুযোগ নেই।' আদালতের মূল ফটকের সামনে বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা হট্টগোলের চেষ্টা করলে তিনি পরিস্থিতি শান্ত করে তাদের বলেন, 'কেউ হট্টগোলের চেষ্টা করবেন না।'
অবরুদ্ধ ছিল পুরান ঢাকার মানুষ :খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে কড়া নিরাপত্তার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হয় পুরান ঢাকার বড় একটা অংশের বাসিন্দাদের। বিকেল পর্যন্ত চানখাঁরপুল, নাজিমুদ্দিন রোড, বকশীবাজার, অরফানেজ রোড, বংশাল, বেগমবাজার, চকবাজার, কাজী আলাউদ্দিন রোড, নিমতলী ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা রীতিমতো অবরুদ্ধ ছিলেন। চানখাঁরপুল থেকে শুরু করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দক্ষিণ দিকে সব ওষুধের দোকান, খাবার দোকান থেকে শুরু করে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ ছিল। তবে ওই সব পথে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স বা রিকশা ও ভ্যানে রোগী নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশকে সহযোগিতা করতে দেখা যায়।
ওই এলাকায় গাড়ি ও রিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় এসএসসি পরীক্ষার পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদেরও নিজেদের বাসায় ঢুকতে বাধা পেতে হয়। বিশেষ করে খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়ার পর বিকেলে নাজিমুদ্দিন রোডের বাসিন্দারা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। তারা কেউ বাসা থেকে বের হতে পারেননি এবং বাইরে থেকে বাসায়ও ঢুকতে পারেননি। সন্ধ্যার পর ওই এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
নয়াপল্টনে মিছিল :খালেদা জিয়ার কারাদণ্ডের প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে নয়াপল্টনে মিছিল বের করলে ছাত্রদল নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। সেখান থেকে ছাত্রদল সভাপতি রাজীব আহসানসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এদিকে, গতকাল বিকেলে আকস্মিক নয়াপল্টনে যান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সেখানে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে যাওয়ার সময় মগবাজার ও কাকরাইল মোড়ে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। এরপরও আমরা ধৈর্য ধারণ করে পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছি। গাড়িতে আগুন দিয়ে, পুলিশের ওপর হামলা করে এবং সরকারের সম্পদ নষ্ট করে কেউ রেহাই পাবে না।
মামলা :পুলিশের ওপর হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় গতকাল রাতে শাহবাগ থানায় বিএনপি নেতা শিমুল বিশ্বাস, হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ বেশ কয়েকজনকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে। রমনা ও চকবাজার থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছিল। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। এদিকে কারাগারে যাওয়ার পর খালেদার গুলশানের বাসভবন 'ফিরোজা' রয়েছে পুলিশবেষ্টিত। গুলশানে তার রাজনৈতিক কার্যালয়টিও হয়ে পড়েছে জনশূন্য। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, রায় ঘিরে এক সপ্তাহ ধরে রাজধানীসহ সারাদেশে বিশেষ নিরাপত্তা মহড়া দেয় র্যাব। পাড়া-মহল্লাসহ সব জায়গায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার কারণে বড় ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।
সুত্র;সমকাল
- IPL নিলাম : ২৬ নম্বর সেটে মুস্তাফিজ, ১ম সেটে রিশাভ পান্ত,দেখেনিন তাসকিন সাকিবের অবস্থান
- চরম দু:সংবাদ: দেশ জুড়ে নেমে এলো শোকের কালো ছায়া মারা গেলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক
- ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয়ের পথে বাংলাদেশ
- ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত চার দলের, বাদ পড়তে পারে ব্রাজিল, দেখেনিন আর্জেন্টিনার অবস্থান
- আইপিএল নিলামে ঝড় তুলে বিশাল পারিশ্রমিকে দল পেলেন নাহিদ রানা
- এইমাত্র শেষ হলো বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচের প্রথম দিনের খেলা, দেখেনিন সর্বশেষ ফলাফল
- IPL নিলাম ২০২৫: মুস্তাফিজ বাদ ধোনির চাওয়াতেই রেকর্ড মুল্যে আইপিএলে দল পেলেন সাকিব
- ব্রেকিং নিউজ : IPL নিলাম: সাকিব মুস্তাফিজ নয় ইতিহাস গড়ে রেকর্ড বিডে যে দলে রিশাদ হোসেন
- ২০২৫ IPL নিলামে চমক দেখিয়ে রেকর্ড দামে দল পেলেন সাকিব
- 2025 IPL নিলাম: চেন্নাইয়ে সাকিব ও মুস্তাফিজ, কলকাতায় তাসকিন, দেখেনিন নাহিদ রানা যে দলে
- মাত্র ৪৩ রানে অলআউট : বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ
- টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, দেখেনিন সর্বশেষ স্কোর
- আইপিএল নিলামে ইতিহাস গড়ে ৪কোটি রুপিতে যে দলে মুস্তাফিজ
- ব্রেকিং নিউজ : যে কারণে বাংলাদেশের ৮ ক্রিকেটারকে নি*ষি*দ্ধ করল বিসিবি
- চরম উত্তেজনায় ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে শেষ হলো ম্যাচ