| ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সেই‘শিশুলীগ’নেতা রিপন যে এখন বিখ্যাত নেতা

জাতীয় ডেস্ক . স্পোর্টস আওয়ার ২৪
২০১৮ জানুয়ারি ২২ ১৩:২৮:০৮
সেই‘শিশুলীগ’নেতা রিপন যে এখন বিখ্যাত নেতা

স্থানীয় সাংবাদিকরা জানান, তার নাম মো. রিপন মৃধা। সবে ৮ বছরে পা দিয়েছে। এরই মধ্যে নিজেকে মুন্সীগঞ্জ ‘শিশুলীগ’- এর সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা দিয়ে রাজনীতির মাঠ সরগরম করে শহরময় পরিচিতি পেয়েছে। একদল ছিন্নমূল শিশু তার দলীয় কর্মী। সে যা বলে সবাই তাই শোনে। সারা দিন সবাই আয়–রোজগার যাই করে তার কাছে হিসেব দেয় তারা। তবে কারো কাছ থেকে কোন টাকা পয়সা নেয় না সে।

কষ্টের টাকা অপচয় না করে সবাই যেন ভাল থাকে সে দিকে লক্ষ রাখতেই তার এই হিসেব নেয়া। তার মত আরো অনেককে নিয়ে একসঙ্গে আড্ডা আর পাউরুটি, চা–বিস্কুট খাওয়া নিত্য দিনের কাজ। ছিন্নমূল এসব শিশুরা সবাই তাকে মানেও বেশ। রিপনের বয়স যা–ই হোক না কেন, ভাবসাব যেন পাক্কা মুরুব্বি। চায়ের কাপে চুমুক দেখে অথবা রাজনীতির কথা বার্তা শুনে মনে হবে সে কোন কিছুতেই পিছিয়ে নেই। দেশের খবর, রাজনৈতিক দলের খবর, খেলার খবর, নেতাদের খবর কোন কিছুতেই পিছিয়ে নেই ৮ বছর বয়সের এ নেতা।

তাকে দেখলে মনে হবে না বুকে কত কষ্টের পাহাড় বয়ে বেড়ায় রিপন। বাবা মো. সেলিম মিয়া রিপনের দুই বছর বয়সেই তাদের ভাই–বোনসহ মাকে ফেলে অন্যত্র বিয়ে করে চলে যায়। এরপর ছয় বছর আগে ছিন্নমূল এই শিশুটি তার মা আর নানীর সাথে নোয়াখালী জেলার লক্ষীপুর থানার মোল্লাবাজার গ্রাম থেকে দুই বছর বয়সে মুন্সীগঞ্জে পাড়ি জমায়। সে সময় সঙ্গে আরো ছিল পাঁচ বছর বয়সি বড় ভাই পারভেজ আর এক বছর বয়সি ছোট বোন লিপি। জেলা শহরের হাটলক্ষীগঞ্জ এলাকার বস্তিতে তাদের ঠাঁই হলেও এবার গর্ভধারিনী মাও তাদের তিন ভাইবোনকে ফেলে আরেকজনের হাত ধরে বিদেশ চলে যায়।

সেই থেকে বৃদ্ধা নানীই তাদের বাবা–মা হয়ে কোন রকমে লালন পালন করে আসছেন। একটু চলাফেরা করা শিখেই রিপন নানীর সাথে জীবনযুদ্ধে নেমে পড়ে। সারা শহরময় তার পদচারণা। এখন আর নানীর সাথে কোথাও যায় না রিপন। নিজেই কারো বাজার এগিয়ে দিয়ে, অথবা কোন দোকানে কাজ করে দিয়ে দিব্বি আরামে চলে তার নিজের পেট। বড়ভাই ১১ বছরের পারভেজ শহরের জিপসি ফুড কর্নারে ১৫০০ টাকা বেতনে কাজ করে। ৭ বছরের ছোট বোন লিপি নানীর সাথে থাকে। কারো কোন লেখা পড়া করার মতো সুযোগ হয়নি। তারা ভাই–বোন এখন জীবন যুদ্ধের একেক জন সৈনিক।

রিপন পড়ালেখা করার সুযোগ না পেলেও রাজনীতির দীক্ষা তার বেশ ভালোই। সে বুঝতে শুরু করার পর থেকে মনে প্রানে আওয়ামী লীগকে ভালবাসে। তার প্রিয় নেতা জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর সাবেক এমপি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তার পুত্র মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র হাজী মোহম্মদ ফয়সল বিপ্লব। রিপন বর্তমানে স্বঘোষিত জেলা ‘শিশুলীগের’ সাধারণ সম্পাদক বলে তার দাবী। এ কারনে সে দলীয় সকল কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে। তার সাথে আলাপ করে জেলার রাজনীতি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। জেলা আওয়ামী লীগের ভীতরকার বিবাদ, জেলা বিএনপির ভাঙন ও চরম দুর্দশা, কে কোন দল থেকে কি কারনে কোন দলে যোগ দিচ্ছে– সবাই রিপনের জানা।

দেশ প্রেমের ঘাটতি নেই তার মাঝে। নিজের টাকায় ফুলের তোড়া বানিয়ে এবার ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছিল রিপন। শুধু তাই নয়, তার প্রিয় নেতা আলহাজ্ব ফয়সল বিপ্লব মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় সর্বপ্রথম তাকেও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় এই ছিন্নমূল শিশুটি। পিতা–মাতাহীন ছিন্নমূল এই শিশুটির শ্রদ্ধবোধ আর দলের প্রতি ভালবাসা দেখে জেলার আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের প্রায় সকল নেতাকর্মী এখন তাকে চেনে। সবার কাছেই আদরের ছেলে রিপন। রিপনের বিপদের কথা শুনলে ছুটে যায় বড় বড় নেতারা। তাদের আদর পেতে সকাল থেকে গভীর রাত অবধি শহরের কাচারী এলাকায় দলীয় নেতাদের সাথে ঘুরতে দেখা যায় রিপনকে। হয়তো মনের অজান্তে পিতার আদর খুঁজে ফেরে শিশু রিপন।

ইতিধ্যেই ছিন্নমূল এই শিশুটি মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র হাজী মোহম্মদ ফয়সল বিপ্লবের মন কেড়েছে। রিপনের দেশপ্রেম, আত্মপ্রত্যয়, শ্রদ্ধা আর ভালবাসা দেখে মেয়র প্রথমেই ছিন্নমূল শিশুদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। মেয়র বলেন, ছিন্নমূল এসব শিশুরা আমাদের সন্তানের মত। তারা পরিস্থিতির শিকার হয়ে এ পরিনতিতে। সমাজের সবার উচিত স্নেহ–ভালবাসা দিয়ে তাদেরকে সু–পথে ফিরিয়ে আনা। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন শহরের সকল ছিন্নমূল শিশু বাধ্যতামূলক শিক্ষা গ্রহণ করবে। যারা পড়তে না চাইবে তাদেরকেও বাধ্য করা হবে লেখাপড়া করার জন্য। সমাজে ভালভাবে বেড়ে ওঠা, আর দশটা শিশুর মত তাদেরও সুন্দরভাবে বসবাস করার পথ দেখাতে চান মেয়র। এ ছাড়া তাদের শিক্ষার পাশাপাশি অন্ন, বস্ত্র আর বাসস্থানের ব্যবস্থার পরিকল্পনা করছেন বলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান।

এদিকে শিক্ষার জন্য শিশুনেতা রিপনকে অনেকে বই, খাতা, কলমসহ নগদ টাকা, পোষাক সব দিতে চাইলেও সে পড়তে নারাজ। তার এখন প্রধান নেশা রাজনীতি। তার ইচ্ছা চিরকাল যেন আওয়ামী লীগ সরকারে থেকে দেশ চালায় আর দেশের উন্নতি করে। এ জন্য সে প্রাণপন কাজ করবে। পিছুটান নেই তার। বাবা–মা কারো জন্য কোন চিন্তা নেই তার। তাদের জন্য কোন অভিযোগও নেই। মা–বাবাতো তাদের যার যার স্বার্থ বেছে নিয়ে তাকে ডাস্টবিনে ফেলে রেখে গেছে। সে জানে সে শুধুই একা। আর এ কারনে তার লেখাপড়া, বাড়ি–গাড়ি কিছুই দরকার নেই। শুধু আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন–বিপ্লব এবং এই দেশ ভাল থাকলেই সে খুশি। তার ভাষায় টিভিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখে সব কষ্ট ভুলে যায় সে। দূর থেকে নাকী শেখ হাসিনা তাকে এবং তার দলের সবাইকে আদর করে।

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

ক্রিকেট

আইপিএল নিলামে ঝড় তুলে বিশাল পারিশ্রমিকে দল পেলেন নাহিদ রানা

আইপিএল নিলামে ঝড় তুলে বিশাল পারিশ্রমিকে দল পেলেন নাহিদ রানা

আইপিএলের ২০২৪ আসরের নিলামকে ঘিরে এবার ব্যাপক আলোচনা তৈরি হয়েছে। ২৪-২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য নিলামে বাংলাদেশের ...

চরম উত্তেজনায় শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা, দেখেনিন ফলাফল

চরম উত্তেজনায় শেষ হলো বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের খেলা, দেখেনিন ফলাফল

অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টেস্টের দ্বিতীয় দিনটা ছিল পুরোপুরি ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিয়ন্ত্রণে। প্রথম দিন ...

ফুটবল

পয়েন্ট টেবিল প্রকাশ : ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে আরও যত পয়েন্ট দরকার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার

পয়েন্ট টেবিল প্রকাশ : ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত করতে আরও যত পয়েন্ট দরকার ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার

২০২৪ সালের আন্তর্জাতিক ফুটবল সূচির প্রায় শেষ প্রান্তে এসে নিজেদের বছরের শেষ ম্যাচ খেলেছে দক্ষিণ ...

২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা পেতে আরও যত পয়েন্ট দরকার আর্জেন্টিনার

২০২৬ বিশ্বকাপে জায়গা পেতে আরও যত পয়েন্ট দরকার আর্জেন্টিনার

লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে আর্জেন্টিনা। পেরুর বিপক্ষে ১-০ গোলের জয়ে ২৫ ...



রে