৬ যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর
তাদের দাবি, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ বছর পর শুরু হওয়া বিচার অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করা হয়েছে। পৃথিবীর ইতিহাসে এত অল্প সময়ে বেশি সংখ্যক আসামির দণ্ড কার্যকর এবং দণ্ড ঘোষণার নজির আর নেই। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে দেশ মুক্ত হয়েছে। একাত্তরে সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, ধর্মান্তর, দেশান্তর এবং নির্যাতনের দায়ে ১৯৭২ সালে বিচার শুরু হলেও তা শেষ করা হয়নি। তারপর ১৯৭৫ সালের পরে এসে পুরোপুরি অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। তবে কলঙ্ক মুক্তির এই ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের মাধ্যমে।
২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি প্রথম রায়টি দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হয়। পলাতক থাকায় তার রায় এখনও কার্যকর করা যায়নি। অান্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের সাফল্যের পাল্লাই বেশি। তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর বলেছেন, এই সাত বছরে অর্জন বলতে গেলে অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো সাফল্য অর্জন করেছি আমরা। এই বিচারের মাধ্যমে প্রমাণ করতে পেরেছি যে, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অদম্য সাহসী, আপোসহীন। স্বাধীনতার ৪০ বছর পর হলেও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসছে বাংলাদেশ।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় শহীদ হয় ৩০ লাখ মানুষ। ইজ্জত হারায় ৪ লাখ মা-বোন। নির্যাতনের মুখে এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নেয়। যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলা সংখ্যা বাড়ার কারণে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরেকটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। পরবর্তীতে মামলা কমে আসায় ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর দুটি ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। ইতোমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার ৩০তম রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে আপীল বিভাগে ৭টি মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এখনো সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ১৯টির বেশি মামলা।
সাতটি রায়ের মধ্যে ৬টিতে জামায়াতে ইসলামীর দুই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কাদের মোল্লা ও মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী ও জামায়াতের নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাশেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করেছে সরকার। অন্যদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ চূড়ান্ত রায় রিভিউতে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সাজা আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন।
শুনানি চলার মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধকালীন জামায়াতে ইসলামীর আমির গোলাম আযম ও বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীমের মৃত্যু হওয়ায় তাদের আপীলের নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে কমপক্ষে আরো ১৮টির বেশি মামলার বিচার কাজ চলছে। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী বলেন, স্বাধীনতার ৪০ থেকে ৪৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আলোর মুখ দেখেছে। প্রসিকিউশন টিমের পক্ষ থেকে আমার মূল্যায়ন, ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পযর্ন্ত ৩০টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এটা আমাদের বড় ধরনের সাফল্য। এখানে সরকারেরও সফলতা আছে। ১৯৭৫ সালের পর বিচার হওয়ার সম্ভাবনা বন্ধ হয়েছিল। অপরাধীদের অাধিপত্য ছিল বেশি। সেই রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সরকার এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসেছে।
ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এম. সানাউল হক বলেন, ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি প্রধান অঙ্গীকার ছিল, ২০০৯ সালে সেটি পালার্মেন্টে সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা হয়। বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি ছিল প্রসিকিউশন, তদন্ত সংস্থা, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি, মুক্তিযোদ্ধা এবং মিডিয়ার সর্বাত্মক সহযোগিতায় ৪০ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আলোর মুখ দেখেছে। তিনি বলেন, আমাদের সফলতা এজন্য যে এখন পর্যন্ত কোন মামলার আসামি নিয়ে ভুল তথ্য আসেনি। বিচার নিয়ে যে সমস্ত প্রশ্ন তোলা হয়েছিল তা এখন আর নাই। কারণ এখানে সবাইকে সমান সুযোগ দেয়া হয়েছে।
এম. সানাউল হক আরো বলেন, কম্বোডিয়ায় যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়ার চাইতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়ায় আসামিরা অনেক বেশি সুবিধা পেয়েছেন। এরপরও এ বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার কিছু নেই। বিচার প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যেমন সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়েছে, তেমনি অভিযুক্তদের আইনজীবীরাও সাক্ষী হাজির করেছেন। উভয়পক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ পেয়েছেন। বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে উন্মুক্ত পরিবেশে। তিনি বলেন, সরকার নির্বাচনের আগে করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গীকার যথাযথভাবে পূরণ করতে পেরেছেন। তিনি বলেন, এর দ্বারা এটাই প্রমাণিত হয় যে, অপরাধ যখনই করা হোক না কেন তার বিচার হয়। এই বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একাত্তরে চরম ক্ষতির শিকার পরিবারগুলো ন্যায়বিচার পেয়েছেন।
প্রথম মৃত্যুদণ্ডপ্রথমে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে। ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর তার ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয়।
দ্বিতীয় মৃত্যুদণ্ডদ্বিতীয় অপরাধী হিসেবে ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল রাত ১০টা ১ মিনিটে মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
তৃতীয় ও চতুর্থ মৃত্যুদণ্ড একসঙ্গে কার্যকরএকই অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে।
পঞ্চম মৃত্যুদণ্ডএকই অপরাধে জামায়াতের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীকে ২০১৬ সালের ১১ মে রাত ১২টা ১০ মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
ষষ্ঠ মৃত্যুদণ্ডএকই অপরাধে জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকর করা হয় ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কাশিমপুর কারাগারে রাত ১০টা ৩৫ মিনিটে।
সাঈদীর মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তিএছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করছেন জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর কারাগারে মারা গেছেন ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম এবং বিএনপির সাবেক নেতা আবদুল আলীম। তিনি সাজা ভোগ করা অবস্থায় ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট মারা যান। তার আমৃত্যু কারাদণ্ড হয়েছিল।
এদিকে বর্তমানে আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসিসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পাওয়া বেশ কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর মামলা। তারা হলেন, জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সুবহান, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম, সাবেক জাপা নেতা সৈয়দ মো. কায়সার, বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেন, জাপার সাবেক সাংসদ আবদুল জব্বার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের রাজাকার মাহিদুর রহমান।
আজহার-কায়সার-সুবহানের আপিল শুনানির অপেক্ষায়মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে করা এটিএম আজহারুল ইসলাম, সৈয়দ মো. কায়সার ও মাওলানা আবদুস সুবহানের আপিল শুনানির জন্য বেশ কয়েকবার আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ছিল।
- IPL নিলাম : ২৬ নম্বর সেটে মুস্তাফিজ, ১ম সেটে রিশাভ পান্ত,দেখেনিন তাসকিন সাকিবের অবস্থান
- চরম দু:সংবাদ: দেশ জুড়ে নেমে এলো শোকের কালো ছায়া মারা গেলেন বাংলাদেশ দলের সাবেক অধিনায়ক
- IPL 2025 নিলামে রেকর্ড গড়লেন তাসকিন ও নাহিদ রানা, দেখেনিন সাকিব মুস্তাফিজের অবস্থান
- ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর দুর্দান্ত বোলিংয়ে জয়ের পথে বাংলাদেশ
- ২০২৬ বিশ্বকাপ নিশ্চিত চার দলের, বাদ পড়তে পারে ব্রাজিল, দেখেনিন আর্জেন্টিনার অবস্থান
- এইমাত্র শেষ হলো বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের ম্যাচের প্রথম দিনের খেলা, দেখেনিন সর্বশেষ ফলাফল
- IPL নিলাম ২০২৫: মুস্তাফিজ বাদ ধোনির চাওয়াতেই রেকর্ড মুল্যে আইপিএলে দল পেলেন সাকিব
- 2025 IPL নিলাম: চেন্নাইয়ে সাকিব ও মুস্তাফিজ, কলকাতায় তাসকিন, দেখেনিন নাহিদ রানা যে দলে
- ২০২৫ IPL নিলামে চমক দেখিয়ে রেকর্ড দামে দল পেলেন সাকিব
- মাত্র ৪৩ রানে অলআউট : বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জ
- টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, দেখেনিন সর্বশেষ স্কোর
- ব্রেকিং নিউজ : ব্যাপক হারে কমলো জ্বালানি তেলের দাম
- ব্রেকিং নিউজ : যে কারণে বাংলাদেশের ৮ ক্রিকেটারকে নি*ষি*দ্ধ করল বিসিবি
- চরম উত্তেজনায় ৯ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে শেষ হলো ম্যাচ
- সাকিব-মাশরাফিকে নিয়ে অবিশ্বাস্য মন্তব্য করে নতুন করে আলোচনার ঝড় তুললেন ক্রীড়া উপদেষ্টা