সৌদি আরবের পার্শ্ববর্তি দেশ ইয়েমেনের সাথে বিগত তিন বছর যাবত যুদ্ধে প্রচুর অর্থ ব্যয় ও কয়েকটি দেশ তৈল ক্রয় বন্ধ করে দেয়ায় বর্তমানে দেশটির অর্থনৈতিক অবস্হা খুবই খারাপ হওয়ায় কর্ম সংস্হানের ঘাঁটতিসহ নানা জটিলতায় ভোগছে প্রবাসিরা।

সৌদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ তাদের অথনৈতিক ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে প্রবাসিদের উপর নতুন আকামা ফি ধার্য করায় বিপাকে প্রবাসিরা। বাংলাদেশি প্রবাসিসহ বিদেশি নাগরিকদের কাছ থেকে গত পহেলা জুলাই হতে তাদের পরিচয় পত্র নবায়ন করতে বর্ধিত ফি নিতে শুরু করেছে । এ ফি ২০১৭ সালে ১০০ শত রিয়াল,২০১৮ সাল ২০০ শত রিয়াল,২০১৯ সাল ৩০০ শত রিয়াল এবং ২০২০ সাল নাগাদ তা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ৪০০ শত রিয়ালে পৌছঁবে।

ভিশন ২০৩০ অনুসারে সৌদি অর্থনীতিতে পণ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের করারোপ করা হয়েছে তাতে তেল রফতানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প অর্থনীতির যে পরিকল্পনা করেছেন তাতে এ ধরনের আকামা ফি বৃদ্ধি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

ব্যাংক অব সৌদি ফ্রান্সি এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে যাতে বলা হয় ,এ সব কারনেই দেশটিতে দিন দিন অবৈধ প্রবাসির সংখ্যা বেড়েই চলছে। এছাড়াও প্রতিবেদনে আরোও উল্লেখ করা হয়, বর্তমানে সৌদি আরবে ১ কোটি ৭০ লাখ বিদেশি নাগরিক কাজ করছে। যাতে বাংলাদেশিসহ বিদেশি নাগরিকদের পরিবারের সংখ্যা ১১ লাখ। আকামা ফি বৃদ্বির কারনে অনেক বাংলাদেশি প্রবাসিরা তাদের পরিবার দেশে ফেরত পাঠাছে। এছাড়াও সৌদিতে দীর্ঘ দিন নিষেধাজ্ঞা থাকার পর ভিসা চালু হলেও পর্যাপ্ত কর্ম সংস্হান না থাকায় সিমাহীন কষ্টে রয়েছে নতুন ভিসায় আগত বাংলাদেশি প্রবাসিরা। যাদের অনেকে ৬/৭ মাস কাজ না পেয়ে থাকা খাওয়ার খরচের জন্য দেশ থেকে টাকা নিতে হচ্ছে।

কুমিল্লা মিয়া বাজার এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে সৌদি প্রবাসি মনির হোসেন জানায়,সৌদিতে বর্তমানে নতুন পুরাতন অনেক বাংলাদেশির কাজ না থাকায় খুব কষ্টে দিন যাপন করছে যা দেশের মানুষকে বুঝানো সম্ভব না । এছাড়া ও সৌদি সরকার আজনবিদের মোবাইল ব্যবসা নিষিদ্ধ করার কারনে এ বেকারত্ব বেড়ে গেছে। এতে প্রায় ১০ হাজার বাংলাদেশি নিজ ব্যবসা বন্ধ করে বেকারত্বে রয়েছে,অনেকে দেশেও চলে গেছে।

মনির আরো জানায়, নতুন ভিসায় যারা আসছে কোন কারন ছাড়া তাদেরকে কপিল হুরুফ দিয়ে দিছে। এছাড়াও সৌদি পুলিশ স্হানে স্হানে চেক পোষ্ট বসিয়ে আকামা থাকা সত্বেও দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। গত ছয় মাসে রিয়াদের বাতা থেকে প্রায় ৬ শতাধিক প্রবাসিকে গ্রেফতার করে । তাদের অনেকে টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেলেও বাকিদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়।

আমেরিকায় প্রবাসিরা অবৈধ থেকে বৈধ হয়, আর সৌদিতে বৈধ থেকে অবৈধ হয়। বাংলাদেশ দুতাবাসের তথ্য মতে, বর্তমানে দেশটিতে প্রায় পাঁচ লাখ বাংলাদেশি অবৈধ রয়েছে, এদের মধ্যে অসংখ্য প্রবাসি আউটপাসে দেশে ফেরত গিয়েছে।

মনির আরো জানায় এত প্রতিকূলতার মধ্যে প্রবাস নামক জেলখানায় থেকেও কি পেলাম জীবনে, আমরা হলাম রেমিটেন্স এর বিশাল একটা অংশ,আমাদের রেমিটেন্স দেশে অর্থনিতির সাথে জড়িত। দেশে অর্থনীতির বেশির ভাগ অংশটা যোগান দেই আমরা রেমিটেন্স যোদ্ধারা। তারপরও আমরা কতটুকু সম্মান পেয়েছি সরকারি কিংবা বেসরকারি ভাবে পাসপোর্ট অফিস থেকে মেডিক্যাল এয়ারপোর্টসহ সব যায়গায় হয়রানি আর হয়রানি। এত প্রতিকূলতার মধ্যেও পরিবার পরিজনদের সুখে রাখতে অজস্র কষ্ট বুকে চেপে দিনরাত জীবন সংগ্রাম করেই যাচ্ছে প্রবাসিরা।