বাংলাদেশের ট্রাভেল এজেন্সি শিল্পের জন্য একটি বড় ধাক্কা অপেক্ষা করছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় প্রথমবারের মতো দেশের ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসার জন্য একটি নতুন পরিপত্র প্রস্তাব করেছে। এর মধ্যে একটি সুপারিশ রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, এক ট্রাভেল এজেন্সি আরেকটি ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে এয়ার টিকিট ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। মন্ত্রণালয় এই পদক্ষেপটি গ্রাহকদের হয়রানি থেকে বাঁচাতে এবং ট্রাভেল ব্যবসায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে চায়। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে শঙ্কা এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের ট্রাভেল এজেন্সির মালিকরা।

তাদের মতে, এই খসড়া পরিপত্র বাস্তবায়ন হলে দেশের শত শত ট্রাভেল এজেন্সি বন্ধ হয়ে যাবে। কেননা, আন্তর্জাতিক ট্রাভেল ব্যবসায় এজেন্ট টু এজেন্ট (বি-টু-বি) মডেলটি বেশ পুরনো এবং বিশ্বব্যাপী এর প্রচলন রয়েছে। বাংলাদেশে এই নিয়ম বন্ধ করা হলে, স্থানীয় এজেন্সিগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না। এর ফলে হাজারো মানুষ, যারা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত, তাদের জীবিকা বিপন্ন হবে।

এই পরিপত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা করার জন্য আন্তর্জাতিক এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) থেকে সদস্যপদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা। যদিও বড় ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর জন্য এটি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া, ছোট ও মাঝারি আকারের এজেন্সির জন্য এটি বড় একটি বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আইএটিএ সদস্যপদ পেতে ৩০ লাখ টাকা ব্যাংক গ্যারান্টি দিতে হয়, যা অধিকাংশ ছোট এজেন্সির পক্ষে সম্ভব নয়। এর ফলে, তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কোনো উপায় থাকবে না।

বর্তমানে, দেশে ৫,৭৪৬টি লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে, কিন্তু মাত্র ৯৭০টি এজেন্সি আইএটিএ স্বীকৃতি পেয়েছে। এর মধ্যে ৩৫০টি এজেন্সির বড় বড় এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রির অনুমতি রয়েছে। যদি এক ট্রাভেল এজেন্সি অন্যের মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করতে না পারে, তবে ৫ হাজারেরও বেশি ট্রাভেল এজেন্সি তাদের কার্যক্রম বন্ধ করতে বাধ্য হবে। এর ফলে, শুধু বড় ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর হাতে বাজার চলে যাবে, যা দেশের ট্রাভেল ব্যবসার বৈচিত্র্য ও প্রতিযোগিতা হুমকির মুখে ফেলবে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই খসড়া পরিপত্র নিয়ে একাধিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে এখনও এটি চূড়ান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পর্যটন) ফাতেমা রহিম ভীনা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে, এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ট্রাভেল ব্যবসায় অস্থিরতা সৃষ্টি হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এদিকে, দেশের ট্রাভেল এজেন্সি মালিকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, যদি এই নিয়ম কার্যকর হয়, তবে বড় এজেন্সিগুলো একচেটিয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করবে এবং কম পুঁজির ছোট এজেন্সিগুলো ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে না। মো. গোফরান চৌধুরী, মঈন ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী, বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে বড় এয়ারলাইন্সের টিকিট বিক্রি করার অনুমতি নেই এবং পরিপত্র বাস্তবায়িত হলে তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, "এটি করলে বড় প্রতিষ্ঠানের হাতে পুরো বাজার চলে যাবে, বিদেশি এজেন্টরা এর সুযোগ নেবে।"

দেশের বিভিন্ন শহরে ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মধ্যে মাত্র কিছু সংখ্যক প্রতিষ্ঠান আইএটিএ সদস্যপদ পেয়েছে। এই পরিপত্র বাস্তবায়িত হলে, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের যাত্রীরা টিকিট কিনতে ভোগান্তিতে পড়বেন, এবং তাদের খরচ বাড়বে।

এই পরিস্থিতিতে, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ বলেন, "এই নতুন পরিপত্রের সঙ্গে আমরা একমত নই। পাঁচ হাজারেরও বেশি ট্রাভেল এজেন্টের মধ্যে মাত্র কয়েকটি আইএটিএ সদস্য, তাহলে বাকিরা কীভাবে ব্যবসা করবে?" তার মতে, এটি পুরো খাতের জন্য ক্ষতিকর হবে এবং স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সুবিধা হ্রাস পাবে।

এখনও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি, তবে দেশের ট্রাভেল ব্যবসায়ীরা এই নতুন পরিপত্রের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ জানিয়ে একটি সমাধানের প্রত্যাশা করছেন।