মাত্র কয়েক সেকেন্ডে , ঢাকায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা

শুক্রবার (২৮ মার্চ) মিয়ানমারের মান্দালয়ে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে পুরো অঞ্চল। এর প্রভাব অনুভূত হয় বাংলাদেশ, ভারত, চীন ও থাইল্যান্ডে। এ ঘটনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, বিশেষ করে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে একটি ৩৩ তলা ভবন মুহূর্তেই ধসে পড়েছে।
ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল অগভীর হওয়ায় এর কম্পন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশেও শুক্রবার দুপুর ১২টা ২৫ মিনিটে ভূমিকম্পের ধাক্কা অনুভূত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের ঝুঁকি এখনো শেষ হয়ে যায়নি, বরং পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আরও বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকাসহ বড় শহরগুলোর ঝুঁকি
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ভূগোলগত অবস্থান অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ভারত, মিয়ানমার ও ইউরেশিয়ান প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত হওয়ায় এ অঞ্চলে বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা সবসময়ই থাকে। গত ৩০ বছরে এত শক্তিশালী ভূমিকম্প এই অঞ্চলে দেখা যায়নি, যা ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ‘৭ মাত্রার ভূমিকম্প যদি বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় হয় তাহলে এটি মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনবে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ঢাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। ঢাকার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি কারণ শহরের বেশিরভাগ ভবন ভূমিকম্প প্রতিরোধী নয়।'
কেন বাড়ছে ভূমিকম্পের ঝুঁকি?
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী জানান, ‘বাংলাদেশের আশপাশে তিনটি প্রধান টেকটোনিক প্লেট সক্রিয় রয়েছে। এ প্লেটগুলোর মুভমেন্ট প্রতি বছর পাঁচ সেন্টিমিটার বা ৫০ মিলিমিটার। অর্থাৎ, আমরা ধীরে ধীরে ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।’
এছাড়া, মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস-এর তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ভূমিকম্পের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ২০টি শহরের মধ্যে ঢাকা অন্যতম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছোট ছোট ভূমিকম্পের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ভূমিকম্পের শঙ্কা আরও বাড়ছে।
কী করা উচিত?
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘ভূমিকম্প মোকাবিলায় সবার আগে সচেতনতা জরুরি। ঢাকার বেশিরভাগ ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, তাই সেগুলো ভূমিকম্প নিরোধক করা প্রয়োজন।’
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, বড় ভূমিকম্প হলে দ্রুত খোলা জায়গায় চলে যেতে হবে। শক্ত কোনো টেবিল বা ফার্নিচারের নিচে আশ্রয় নিতে হবে এবং ভবন থেকে নামার সময় লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি দিয়ে নামতে হবে।