প্লেনে দুই রমণীর মাঝে এক রাত, অদ্ভুত কোলাহল শুনুন অস্বস্তির গল্প
রায়ানএয়ার, ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় বাজেট এয়ারলাইন। এটি সস্তা ভ্রমণের জন্য আদর্শ হলেও, যাত্রার অভিজ্ঞতা অনেক সময় বেশ কঠিন হয়ে ওঠে। সস্তা টিকিট মানেই পরিষেবার ক্ষেত্রে কিছু সীমাবদ্ধতা মেনে নিতে হবে। পছন্দের সিট পেতে হলে বাড়তি অর্থ খরচ করতে হয়, আর তা না করলেই সিট বরাদ্দ হয় এলোমেলোভাবে। আমি এবং আমার স্ত্রী মারিয়া এই নিয়মের শিকার হলাম।
আমাদের গন্তব্য ছিল সুইডেনের স্টকহোম। মালাগা থেকে রওনা দিচ্ছি রাতের এক ফ্লাইটে। সময় তখন প্রায় ১১টা। আমার আর মারিয়ার সিট একসঙ্গে না থাকায় একটু বিরক্ত লাগলেও ভাবলাম, রাতের ফ্লাইট, সবাই ঘুমাবে—সবকিছু মসৃণই হবে। বাস্তবতা যে এমন হবে না, তা তখনো বুঝিনি।
প্লেনে উঠে চারদিকে তাকিয়ে দেখি, যাত্রীরা সবাই যেন এক ধরনের “জায়গা দখলের দৌড়” শুরু করেছে। কেউ জানালার সিট চাচ্ছে, কেউ বা তার ব্যাগ রাখার উপযুক্ত জায়গা খুঁজে হন্তদন্ত। আমি আমার বরাদ্দকৃত সিটে গিয়ে বসলাম। সিটটি ছিল মাঝখানে—ডানপাশে এক মধ্যবয়সী মহিলা আর বাঁপাশে একজন তরুণী। মারিয়া আমার থেকে বেশ কয়েক সিট দূরে। মনে হলো, ও একবার তাকিয়ে একটু মুচকি হাসল, যেন বলতে চাইছে, "কিছুক্ষণ সামলে নাও, দেখা হবে শেষে।"
শুরু হলো সমস্যাপ্লেন উড়তে শুরু করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ডানপাশের মহিলাটি আমার কাঁধে হেলান দিয়ে দিব্যি ঘুমিয়ে পড়লেন। প্রথমে ভেবেছিলাম, হয়তো একটু পরে উঠে বসবেন। কিন্তু তিনি যেন আরাম করে আমাকে তার বালিশ বানিয়ে ফেললেন। তার নাক ডাকার শব্দ সারা কেবিন জুড়ে প্রতিধ্বনি তুলছিল।
এদিকে বাঁপাশের তরুণীটি যেন বেশ নার্ভাস। প্লেন ছেড়ে আকাশে উঠতেই সে আমার হাত শক্ত করে ধরে ফেলল। আমি একদম হতভম্ব! কী হচ্ছে এটা? এমনভাবে আমার হাত ধরল, যেন প্লেনটি ডুবে যাচ্ছে আর সে আমার হাতটাই বাঁচার একমাত্র সম্বল হিসেবে পেয়েছে। অস্বস্তি ক্রমশ বাড়ছিল, কিন্তু নিজেকে সামলে বললাম, "সব ঠিক আছে, রাত কাটিয়ে যাবে।"
যাত্রার আরও জটিলতাকিছুক্ষণ পর প্রস্রাবের চাপ অনুভব করলাম। কিন্তু নড়াচড়ার উপায় নেই। ডানদিকে মহিলা আমার কাঁধে এমনভাবে চেপে আছেন যে আমি একচুলও নড়তে পারছি না। আর বাঁদিকে সেই তরুণী আমার হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে। আশপাশের যাত্রীরা ঘুমাচ্ছে। কেবিনের আলো কমিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেন ঘুমানোর পরিবেশ তৈরি করা হয়।
আমি একটু ধাক্কা দিয়ে ডানপাশের মহিলাকে বললাম, "ম্যাম, সরি, আমাকে উঠতে হবে।" কিন্তু উনি এমন গভীর ঘুমে ছিলেন যে নড়াচড়ার নামই নেই। তার নাকডাকার শব্দ যেন আরও জোরে হয়ে উঠল। এবার বাঁপাশের তরুণীর দিকে তাকিয়ে বললাম, "তুমি কি আমার হাত ছাড়বে? আমাকে উঠতে হবে।" তরুণীটি যেন আমার কথা শুনতে পাচ্ছে না। বরং সে আমার হাত আরও শক্ত করে ধরে নিজের বুকের দিকে টেনে নিল। আমি মনে মনে ভাবছি, "এ আমি কী করব? কেউ যদি দেখে বসে, তাহলে কীভাবে ব্যাখ্যা দেব?"
কেবিন ক্রুর হস্তক্ষেপএদিকে প্রস্রাবের চাপ বাড়ছে। আমার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙার উপক্রম। হঠাৎ এক কেবিন ক্রুকে পাশ দিয়ে যেতে দেখে হাত তুলে ডাকলাম। আমার অবস্থা বোঝাতে চেষ্টা করলাম। প্রথমে তিনি কিছুটা দ্বিধান্বিত মনে হলেন, যেন পুরো ব্যাপারটি বুঝতে পারছেন না। তারপর এগিয়ে এসে ডানপাশের মহিলাকে জাগানোর চেষ্টা করলেন। অনেক চেষ্টা করার পর তিনি উঠে বসলেন, কিছুটা লজ্জিত হয়ে "সরি" বললেন।
ততক্ষণে বাঁপাশের তরুণীটি হঠাৎই চিৎকার দিয়ে উঠে বলল, "ওহ! সরি! আমি কী করলাম?" তার চেহারায় গভীর অপরাধবোধ। আমি আর বেশি কিছু না বলে টয়লেটের দিকে ছুটলাম।
পুরো ঘটনার কারণটয়লেট থেকে ফিরে জানতে পারলাম, এই দুই যাত্রী ঘুমের ট্যাবলেট খেয়েছিলেন। দীর্ঘ ফ্লাইটে আরাম করে ঘুমানোর জন্য এমন ওষুধের প্রচলন রয়েছে। তবে এসব ওষুধ অনেক সময় নিয়ন্ত্রণহীন আচরণ ঘটায়। সেই রাতে আমার পাশের দুই যাত্রী সেটির জ্বলন্ত উদাহরণ।
একটি শিক্ষাএই অভিজ্ঞতা আমাকে একটি জিনিস ভালোভাবেই বুঝিয়েছে—ভ্রমণে সচেতন থাকা কতটা জরুরি। শুধু নিজের সুরক্ষা নয়, আশেপাশের লোকজনের অদ্ভুত আচরণ সামলানোর জন্যও প্রস্তুত থাকা দরকার।
ইউরোপীয় ভ্রমণে আরেকটি বিষয়ও নজরে এলো। এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধার প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়। ইউরোপে “সম্মতি” একটি বড় বিষয়। কিন্তু কেউ যদি অনিচ্ছাকৃতভাবে অন্যের অস্বস্তির কারণ হয়, সেটিও এড়িয়ে যাওয়া যায় না।
বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটে এই অভিজ্ঞতাআমাদের সমাজে এ ধরনের ঘটনা অন্য রূপ নেয়। বাস বা ট্রেনের মতো পাবলিক পরিবহনে অনেক সময় মেয়েদের প্রতি ইচ্ছাকৃতভাবে এমন আচরণ করা হয়। ইউরোপীয় সমাজে যেটি অনিচ্ছাকৃত এবং আইনত অপরাধ হিসেবে দেখা হয়, আমাদের সমাজে সেটি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে। এই পার্থক্যটি আমাকে আরও একবার ভাবতে বাধ্য করেছে।
আমার এই অভিজ্ঞতা হয়তো বেশ অদ্ভুত, এমনকি মজারও। কিন্তু এটি আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। মানুষ হিসেবে আমরা যেখানেই যাই না কেন, পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সচেতনতা, এবং দায়িত্ববোধ আমাদের আচরণের একটি অপরিহার্য অংশ হওয়া উচিত।
- আবারও বাড়লো সোনার দাম
- আ.লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেফতারে নতুন সিদ্ধান্ত
- চরম দু:সংবাদ : বাংলাদেশি কর্মীদের জন্যশ্রমবাজার বন্ধের আশঙ্কা
- এইমাত্র সরকারি কর্মচারীদের জন্য ঘোষণা করা হলো দারুন সুখবর
- আজ ইতালির ১ ইউরো সমান বাংলাদেশের কত টাকা জেনেনিন
- একলাফে বেড়ে গেলো সৌদি রিয়াল রেট, জেনেনিন আজকের রেট কত
- সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য বড় সুখবর
- দলে যোগ দিলে পদত্যাগ করতে পারেন উপদেষ্টা নাহিদ ও আসিফ
- কমলো মালয়েশিয়ান রিংগিত, জেনেনিন আজকের রেট কত
- রাজনীতিতে ফিরতে হলে আ. লীগকে,কি কি করতে হবে জানালেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম
- আজ সিঙ্গাপুরের ১ ডলার সমান বাংলাদেশের কত টাকা জেনেনিন
- ipl 2025 এ, দল পেলেন বাংলাদেশের তারকা পেসার
- চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি : এক পরিবর্তনে বাংলাদেশ স্কোয়াড, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে দুই ক্রিকেটার
- একলাফে বেড়ে গেলো সৌদি রিয়াল রেট, জেনেনিন আজকের রেট কত
- আজকে বাংলাদেশী টাকায় ওমানি রিয়ালের বিনিময় রেট দেখেনিন