জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র এবং হাটহাজারীর পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম ষষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম এ রায় দেন।

চিন্ময়ের গ্রেপ্তারের পরপরই দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মহল থেকে সংখ্যালঘু কার্ড ব্যবহার করে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে তার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত বিক্ষোভ থেকে সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর সাইফুল ইসলাম আলিফের ওপর হামলা এবং তার মৃত্যুর ঘটনা দেশজুড়ে উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে।

### **ভারত ও আওয়ামী লীগের পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্র** বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চিন্ময়ের পেছনে রয়েছে ভারতীয় ইন্ধন এবং পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের ষড়যন্ত্র। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়ার পর থেকেই দেশকে অস্থিতিশীল করতে একের পর এক কার্ড খেলছে ভারত ও আওয়ামী লীগ। ইসকনকে ব্যবহার করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা তারই একটি অংশ।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালানোর পর থেকে দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে একাধিক ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞরা। কখনো সংখ্যালঘু নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ, কখনো গোপনে সশস্ত্র সংগঠনের তৎপরতা—এভাবে অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপে ফেলতে নানা কৌশল গ্রহণ করেছে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতারা।

### **চিন্ময়ের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ** চিন্ময়ের বিরুদ্ধে রয়েছে রাষ্ট্রদ্রোহিতা, জমি দখল, শিশু নিপীড়নসহ একাধিক গুরুতর অপরাধের অভিযোগ। সর্বশেষ চট্টগ্রামের নিউমার্কেট মোড়ের স্বাধীনতা স্তম্ভে হিন্দুত্ববাদীদের গেরুয়া পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকার অবমাননার ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, চিন্ময়ের বিরুদ্ধে থাকা প্রমাণ এতটাই সুস্পষ্ট যে, তাকে ছাড় দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।

### **ভারতের হস্তক্ষেপ ও শুভেন্দুর হুমকি** চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে ভারতের বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বাংলাদেশকে সীমান্ত অবরোধের হুমকি দিয়েছেন। এছাড়া কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের সামনে বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তিনি। তবে শুভেন্দুর এ হুমকি ভারতের অভ্যন্তরেও ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের এই হস্তক্ষেপ এবং ভুল তথ্য প্রচার কৌশলগত ষড়যন্ত্রেরই অংশ। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ‘উগ্রপন্থীদের’ হামলার কথা উল্লেখ করে ইসকনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া এই ষড়যন্ত্রের প্রমাণ বহন করে।

### **আওয়ামী লীগের মদদে ইসকনের তৎপরতা** আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, চিন্ময়ের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত মিছিলে অনুপ্রবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। এর মধ্য থেকে ছয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের বড় পরিকল্পনার তথ্যও পাওয়া গেছে। ইসকনকে ব্যবহার করে তারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছিল।

### **বাংলাদেশের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের ডাক** বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতের হস্তক্ষেপ এবং আওয়ামী লীগের ষড়যন্ত্রের জাল এখন জাতির সামনে পরিষ্কার। দেশের জনগণ সংখ্যালঘু কার্ডের এই অপব্যবহার এবং ইসকনের উগ্র কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।

সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেপ্তার সেই অঙ্গীকারেরই প্রতিফলন।