বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা সদরের আদালত মাঠে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।

### **তিন মাসের আশা ও নির্বাচনী রোডম্যাপ** মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দিয়েছিলাম। আশা করেছিলাম, তিন মাসের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে তারা একটি নির্বাচনী রোডম্যাপ দেবে। কিন্তু দেরি হলে সমস্যাগুলো আরও জটিল হবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে পরামর্শ নিন। দ্রুত নির্বাচন দেওয়া জাতির জন্য মঙ্গলজনক হবে।”

### **ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দাবি** তিনি বলেন, “ভোট দেওয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরিয়ে পেতে চান। ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’—এই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ভোটের মাধ্যমে জনগণ বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে চান।”

### **আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ** আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, “তারা ভারতে বসে ষড়যন্ত্র করছে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তবে এ দেশের জনগণ ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্য আর মেনে নেবে না। জনগণ এখন মুক্তি চায় এবং ভোটের অধিকার চায়।”

### **বিএনপির লক্ষ্য: বৈষম্যমুক্ত দেশ গঠন** মির্জা ফখরুল আরও বলেন, “বিএনপি বহু আগেই ৩১ দফার মাধ্যমে দেশের কাঠামো কীভাবে চলবে, তা তুলে ধরেছে। জঞ্জাল পরিষ্কার করে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া উচিত। জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচন করার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। আমরা বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে চাই।”

**উল্লেখ্য,** জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এ জনসভায় বিএনপির নেতাকর্মীরা ব্যাপক উপস্থিতি জানান দেন। মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে সরকারের প্রতি সংস্কার এবং দ্রুত নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত হয়।

বিএনপির আন্দোলন শেষ হয়নি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন শেষ হয়নি। জনগণের অধিকার, ভোটাধিকার, বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে, দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে পারলেই এ আন্দোলন শেষ হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ দেশের গণতন্ত্রের জন্য অনেক মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে। এবারের ছাত্র–জনতার আন্দোলনেও ফেনীর অনেককে হত্যা করা হয়েছে। বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ আমাদের ৬০ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। ২০ হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে হত্যা ও ৭০০ নেতা-কর্মীকে গুম করেছে। এখনো সন্তান ও পিতাহারা মানুষজন স্বজনদের ফেরার অপেক্ষা করছেন। আমরা মামলা নিয়ে কারাগারে গেছি, কিন্তু মাথা নত করিনি। এ সংগ্রামের মাধ্যমে আজ ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ ও স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছি।’

এ দেশকে যা কিছু দিয়েছে, তা বিএনপি দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, এ দেশকে যা কিছু দিয়েছে, তা বিএনপি দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ বাকশাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিল। তখন তা টিকিয়ে রাখতে পারেনি। জিয়াউর রহমান এসে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি নতুন করে অর্থনীতি ও সংবাদমাধ্যমকে মুক্ত করেছিলেন। তারপর তাঁকে হত্যার পর এরশাদ চেষ্টা করেছিলেন দেশকে ধ্বংস করার। কিন্তু খালেদা জিয়ার আপসহীন নেতৃত্বের কারণে তাতেও তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।’

আওয়ামী লীগ নির্বাচন করবে কি না, তা জনগণই ঠিক করবে: মির্জা ফখরুলফেনীর ছাগলনাইয়ায় বিএনপির জনসভায় হাজারো নেতা-কর্মী যোদ দেন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এমন সমাবেশে একত্র হয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরের আদালত মাঠে ফেনীর ছাগলনাইয়ায় বিএনপির জনসভায় হাজারো নেতা-কর্মী যোদ দেন।

দীর্ঘ ১৫ বছর পর এমন সমাবেশে একত্র হয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা যায়। বুধবার বিকেলে উপজেলা সদরের আদালত মাঠেছবি: প্রথম আলোমির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, নির্বাচনব্যবস্থা, প্রশাসনিক কাঠামো, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো ধ্বংস করেছে। নিজেরা লুটপাট করেছে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে।

খালেদা জিয়াকে পরাজিত ও ধ্বংস করার জন্য এরশাদ ও আওয়ামী লীগ অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু সবার দোয়ায় আল্লাহর রহমতে তাঁকে পরাজিত করতে পারেনি। তিনি অনেক বেশি অসুস্থ। আমরা তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর চেষ্টা করছি।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও ফেনী-১ আসনের (ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরাম) সাংগঠনিক সমন্বয়ক রফিকুল ইসলাম জনসভায় সভাপতিত্ব করেন। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির গ্রাম সরকারবিষয়ক সম্পাদক বেলাল উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু তালেবের সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন,

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামছুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, বিএনপির সাবেক সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য রেহানা আক্তার, জাতীয় কমিটির সদস্য সাহানা আখতার, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, সদস্যসচিব আলাল উদ্দিন, ফেনী জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মেজবাহ উদ্দিন খান।

এদিকে এ জনসভাকে ঘিরে দুপুর থেকে ফেনী-১ (পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া) আসনের হাজারো নেতা-কর্মী ছাগলনাইয়ার আদালত মাঠে জড়ো হন। দীর্ঘ ১৫ বছর পর এমন সমাবেশে একত্র হয়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে উচ্ছ্বাস দেখা যায়।

এর আগে দুপুরে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পৈতৃক বাড়ির প্রাঙ্গণে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে ঢেউটিন এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।