ভারতের মাটিতে দীর্ঘ ৩৬ বছর পর টেস্ট জয় তুলে নিয়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচনা করেছে। জয়ের জন্য ১০৭ রানের ছোট লক্ষ্য থাকলেও, ম্যাচটি সহজ ছিল না। শেষ দিনে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন ছিল, আর বল সিম করছিল, যা ভারতীয় পেসারদের পক্ষে কাজ করে। যশপ্রীত বুমরাহ নিজের প্রতিটি ডেলিভারিতে উইকেট নেওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন এবং দর্শকদের প্রতিটি বলেই আবেদন শোনা যাচ্ছিল।

নিউজিল্যান্ডের ওপেনার উইল ইয়াং ধৈর্য ধরে খেলার চেষ্টা করছিলেন। দিনের দ্বিতীয় বলেই বুমরাহ টম ল্যাথামকে আউট করে ভারতের জন্য একটি ভালো সূচনা এনে দেন। এরপর কনওয়ে এসে তার শরীরে আঘাত সহ্য করেও কোনো ঝুঁকিপূর্ণ শট না খেলে দলের স্কোরকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তবে, বুমরাহ শেষ পর্যন্ত কনওয়েকে ১৭ রানে আউট করেন এবং সেই সময় নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ছিল ৩৫ রান।

আরও পড়ুন : 2025 আইপিএল নিলাম: ১৮ কোটি রশিদ খান,১৮ কোটি প্যাট কামিন্স,দেখেনিন সাকিব মুস্তাফিজের অবস্থান

ভারতীয় দলের জন্য একটি বড় সমস্যা ছিল পিচের আচরণ সঠিকভাবে বোঝা না যাওয়া এবং তৃতীয় পেসার না নেওয়ার সিদ্ধান্ত, যা তাদের প্রতিপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ করে। ইয়াং এবং রচিন রবীন্দ্র শেষে শান্তভাবে ব্যাটিং করে সহজেই বাকি রান তুলে নেন এবং নিউজিল্যান্ডকে ঐতিহাসিক এই জয় এনে দেন।

বুমরাহ বল করার সময় মনে হচ্ছিল রান পাওয়া কঠিন হবে। তিনি প্রতি ওভারে বল সঠিক জায়গায় ফেলছিলেন এবং ব্যাটসম্যানদের অনেক ভুল শট খেলতে বাধ্য করছিলেন। ল্যাথাম বুমরাহর একটি ইনসুইং বলে আউট হন, যা আরও বেশি ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। কনওয়ে মনে করছিলেন তিনি বুমরাহর বল বুঝে ফেলেছেন, কিন্তু বল সুইং করে তাকে বিভ্রান্ত করে এবং এলবিডব্লিউ হয়ে যান।

বুমরাহ যখন তার সপ্তম ওভারে ছিলেন, তখন রচিন রবীন্দ্র এসে প্রথম তিন বলের মধ্যেই দুইটি বাউন্ডারি মারেন। ইয়াংও রবীন্দ্র জাদেজার প্রথম ওভারে দুটি বাউন্ডারি মেরে চাপ হালকা করেন। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায়, দুই ব্যাটসম্যান স্পিনারদের আক্রমণ করেন, ইয়াং কুলদীপ যাদবের বলে এক দুর্দান্ত ছক্কা হাঁকান।

ভারত প্রথম ইনিংসে ৪৬ রানে অলআউট হয়ে গেলেও, তারা দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। তবে শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ড টিকে থেকে ভারতের বিপক্ষে তৃতীয়বারের মতো টেস্ট জয় নিশ্চিত করে।

নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৪০২ রান (রচিন রবীন্দ্র ১৩৪, ডেভন কনওয়ে ৯১, রবীন্দ্র জাদেজা ৩-৭২) এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ২ উইকেটে ১১০ রান (ইয়াং ৪৮*, রবীন্দ্র ৩৯*, বুমরাহ ২-২৯) করে ভারতকে ৮ উইকেটে পরাজিত করেছে।

আরও পড়ুন : ব্রেকিং নিউজ: সাকিবকে নিয়ে নতুন বিপদে বিসিবি বস ফারুক ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ

ভারতের প্রথম ইনিংসে ৪৬ (পান্ত ২০, হেনরি ৫-১৫, ও'রউর্ক ৪-২২) এবং দ্বিতীয় ইনিংসে ৪৬২ রান (সরফরাজ ১৫০, পান্ত ৯৯, ও'রউর্ক ৩-৯২) করেছিল।

ভারতীয় অধিনায়ক, বলেছেন যে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ের ক্ষেত্রে দল ভালো প্রচেষ্টা করেছে। তারা জানত যে সামনে কী আছে, তাই যতটা সম্ভব রান সংগ্রহ করতে হবে। কয়েকজন ব্যাটসম্যান দারুণ খেলেছে, যা দেখা খুব আনন্দের ছিল। ৩৫০ রানের ঘাটতি পুষিয়ে নেওয়ার সময় খুব বেশি ভাবার সুযোগ ছিল না, শুধু বলের ওপর মনোযোগ দিতে হয়েছে এবং খেলার গতি দেখার চেষ্টা করতে হয়েছে। পার্টনারশিপগুলো ছিল রোমাঞ্চকর, যা দলকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছিল। সহজেই ৩৫০ রানের নিচে অলআউট হয়ে যেতে পারত, তাই এই অর্জন নিয়ে তারা গর্বিত।

ঋষভ পন্ত এবং সরফরাজ যখন ব্যাট করে, তখন সবাই উত্তেজনার মধ্যে থাকে। পন্তের ইনিংস পরিপক্ক ছিল, তিনি এরকম ইনিংস অনেকবার খেলেছেন এবং তার শটগুলোও দুর্দান্ত ছিল। সরফরাজ মাত্র তৃতীয় বা চতুর্থ টেস্টে খুব পরিষ্কার এবং পরিপক্ক খেলেছেন।

প্রথম ইনিংসে ৪৬ রানে অলআউট হওয়া প্রসঙ্গে রোহিত বলেন, "প্রথম দিনের পরের সংবাদ সম্মেলনে আমি বলেছিলাম, আমরা জানতাম এটি চ্যালেঞ্জিং হবে, বিশেষ করে মেঘলা আবহাওয়া এবং কঠিন পিচের কারণে। আমরা ভাবিনি যে আমরা ৪৬ রানে অলআউট হব, তবে নিউজিল্যান্ডের কৃতিত্ব দিতেই হবে। এটা আমাদের পিছিয়ে দিয়েছে, কিন্তু এরকম ম্যাচ মাঝে মাঝে ঘটে। ভালো দিকগুলো সামনে নিয়ে যেতে হবে। আমরা এর আগেও এ ধরনের পরিস্থিতিতে ছিলাম, ঘরের মাঠে হারানোর অভিজ্ঞতাও আছে। এখনও দুটি টেস্ট বাকি আছে, আমরা জানি কী করতে হবে এবং আমরা পরবর্তী দুটি টেস্টে সবকিছু দিয়ে খেলব।"