পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পিটিআই সমর্থিত প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ছাড়াই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সকালে ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হয়েছেন। তাদের প্রায় সবাই পিটিআই-এর সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন।

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান প্রায় ১০ মাস ধরে কারাগারে রয়েছেন। নির্বাচনের কয়েকদিন আগে একের পর এক মামলায় সাজা দেওয়া হয়। দলীয় প্রতীক বাদ দেওয়া হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রচারণায় অনেক বাধার সম্মুখীন হয় তার দলের নেতা কর্মিরা। কিন্তু পাকিস্তানি জনগণ এই প্রত্যাশার প্রতিদান দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের দল সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ব্যাপক ভোটে জয়লাভ করেছে। এর প্রার্থীরা তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান মুসলিম লীগ, নওয়াজ শরিফ এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টিকে পরাজিত করে শীর্ষ আসনে জয়লাভ করে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইমরানের বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে পাকিস্তানের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী দুটি দল পিএমএল-এন এবং পিপিপিকে সরে আসতে হবে।

বিশ্লেষকদের মতে, পরমাণু শক্তিধর পাকিস্তানের রাজনীতিতে সেনাবাহিনীর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। রাজনৈতিক মহলে দীর্ঘদিন ধরেই গুঞ্জন ছিল যে, এই নির্বাচনে সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী নওয়াজ শরিফ। তবে ইমরান খানকে সমর্থনকারী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ওই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেশি আসনে জয়ী হয়েছে। এবারের নির্বাচনে এটাকে বড় চমক হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে, এ পথ এত সহজ ছিল না তাদের জন্য। পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে প্রতিটি নির্বাচনেই সেনাবাহিনীর পছন্দের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন।

ইমরান খানের সামনেও অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল। দলের অনেক নেতাও বিভিন্ন মামলায় কারাবন্দি। মামলার আসামি হয়ে পালিয়ে বেড়িয়েছেন অনেক নেতা। বৈরী এই পরিস্থিতির মধ্যেও চমক জাগানো ফলের বিষয়ে বিশ্লেষকেরা বলছেন, কারাবন্দি ও আত্মগোপনে থেকেও ডিজিটাল মাধ্যমে ভোটারদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন নেতারা।

পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ এড়াতে অনেকেই অজ্ঞাত স্থান থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে জনসমর্থন আদায় করতে পেরেছেন ইমরান সমর্থকরা। আল জাজিরার তথ্য অনুযায়ী, ২৬৬টি আসনের মধ্যে ২৫০টি আসনের ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এরমধ্যে পিটিআইয়ের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা পেয়েছেন ৯৯টি আসন। আর নওয়াজ শরীফের মুসলিম লীগ-এন (পিএমএলএন) জয় পেয়েছে ৭১টি আসনে।

বিলাওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) পেয়েছে ৫৩টি আসন এছাড়া অন্যান্য দল এবং স্বতন্ত্ররা পেয়েছে ২৭টি আসন। একটি আসনের ফলাফল স্থগিত করা হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার বাকি আরও ১৫ আসনের। পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসনে (একটি স্থগিত) ভোটগ্রহণ হয় বৃহস্পতিবার। কোনো দলের সরকার গঠনে প্রয়োজন হবে ১৩৪ আসন।

পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের মোট আসনসংখ্যা ৩৩৬টি। এর মধ্যে ২৬৬ আসনে সরাসরি ভোট হয়। এ ছাড়া বাকি ৭০টি আসন সংরক্ষিত। এসব আসনের মধ্যে ৬০টি নারীদের ও ১০টি সংখ্যালঘুদের।