আমি নিজেই দালাল ছাড়া পাসপোর্ট করেছি। আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে নিজে নিজে পাসপোর্ট করবেন। আমি এখানে ধাপে ধাপে সব কিছু দেখাব। যাতে আপনি খুব সহজেই সব কিছু করতে পারেন।প্রথম ধাপ: টাকা জমা দেওয়া !

পাসপোর্ট করার জন্য সর্ব প্রথম আপনাকে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হবে। সাধারণ পাসপোর্টের ফি ৩০০০ টাকা সাথে ১৫% ভ্যাট। মোট ৩৪৫০ টাকা জমা দিতে হবে। জরুরী পাসপোর্টের ক্ষেত্রে ফি ৬০০০ টাকা। ১৫% ভ্যাটসহ পরবে ৬৯০০ টাকা। সাধারণ পাসপোর্ট করতে সময় লাগবে ২১ দিন আর জরুরী পাসপোর্টে সময় লাগবে ৯ দিন। টাকা জমা দেওয়া যাবে সোনালী ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংকে। তবে টাকা জমা দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট শাখায় জেনে নিবেন পাসপোর্টের টাকা জমা নেয় কিনা। টাকা জমা দেওয়ার পর ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনাকে একটি রশিদ দিবে। রশিদটি সংরক্ষণ করুন।

দ্বিতীয় ধাপ: ফরম পূরণ করা !এরপর আপনাকে ফরম পূরণ করতে হবে। আপনি অনলাইনেই ফরম পূরণ করতে পারবেন। অনলাইনে ফরম পূরণ করার জন্য এখানে ক্লিক করুন। আইডি কার্ড বা জন্ম সনদে আপনার নাম ঠিকানা যেভাবে আছে সেভাবেই লিখুন। ফরম পূরণ করার সময় একটা অপশন আসবে টাকা জমা দেওয়ার রশিদ নাম্বার উল্লেখ করতে। সেখানে জমা রশিদে লাল কালি দিয়ে যে নাম্বার দেওয়া আছে সেটা লিখুন। ফরম পূরণ শেষ হলে আপনার ইমেইলে একটা পিডিএফ ফাইল দিবে। সেটা ডাউনলোড করে ২ কপি কালার প্রিন্ট করুন। এরপর ফরমে স্বাক্ষর করুন। আপনি চাইলে অফলাইনে ফরম সংগ্রহ করে হাতে পূরণ করতে পারেন। ফরম পূরণ করা শেষ হলে ২ ফরমে দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, যে কোন একটাতে টাকা জমার রশিদ আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিন। ভুলেও স্টাপল মারবেন না।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও সত্যায়নঃপাসপোর্ট ফরমের সাথে ১ কপি জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি (যাদের আইডি কার্ড নাই তারা জন্ম সনদের ফটোকপি দিবেন), ছাত্র হলে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি, ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্সের ফটোকপি, সরকারি চাকরি হলে NOC ফরমের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। ছবি ও কাগজপত্র প্রথম শ্রেণির গ্যাজেটেড কর্মকর্তা/ইউপি চেয়ারম্যান/পৌর মেয়র/পৌর কাউন্সিলর/সিটি মেয়র/কাউন্সিলর দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে। সত্যায়নকারীর ফোন নাম্বারও ফরমে লিখে দিবেন।

তৃতীয় ধাপ: ফরম জমা দেওয়া ও ছবি তোলা:সব কিছু ভাল মত চেক করে আপনার বর্তমান ঠিকানার রিজিওনাল পাসপোর্ট অফিসে চলে যান ফরম জমা দিতে। ফরম ঠিক থাকলে ঢাকার অফিসগুলোতে ঝামেলা করবে না। কিন্তু ঢাকার বাইরে দালাল না ধরলে ঝামেলা করবে। আপনার সব কিছু ঠিক থাকলেও রিসিপসনের লোকেরা অপ্রয়োজনীয় ভুল বের করবে। এ রকম পরিস্থিতিতে পরলে ওয়েবসাইট থেকে উপ-পরিচালকের ফোন নাম্বার বের করে মহোদয়কে সমস্যা অবহিত করবেন।

তিনি আপনার ফরম জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিবেন। রিসিপসন অফিসার ফরমে সাইন করার পর আপনাকে কাউন্টারে ফরম জমা দিয়ে নাম্বার নিতে হবে। এরপর ছবি তোলার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে। ঢাকার অফিসগুলোতে অনেক লম্বা লাইন হয়। তবে ঢাকার বাইরে ভিড় নাই বললেই চলে। ছবি তোলা শেষ হয়ে গেলে আপনাকে একটি ডেলিভারি স্লিপ দিবে। সেটি সংরক্ষণ করুন। পাসপোর্ট আনতে এই স্লিপটি লাগবে।

চতুর্থ ধাপ: পুলিশ ভেরিফিকেশন !ফরম জমা দেওয়ার কয়েক দিন পরেই ডিএসবি অফিস থেকে পুলিশ ফোন দিবে বা নিজেরাই আপনার বাসায় আসবে ভেরিফিকেশনের জন্য। তবে আপনি যদি দালাল না ধরেন তাহলে অনেক সময় পুলিশ ভেরিফিকেশন করতে অনেক সময় নিবে। তাই ডিএসবি অফিসে খোঁজ খবর নিবেন। ভেরিফিকেশনের জন্য বিদ্যুৎ বিলের কপি, জন্ম সনদ, নাগরিক সনদের ফটোকপি লাগবে। সেগুলো আগেই সংগ্রহ করে রাখুন। ভেরিফিকেশন জন্য পুলিশ টাকা চাইবে।

কিন্তু টাকা দিবেন না। টাকা না দিলে বিলম্বের কথা বললে সার্কেল এসপির কাছে অভিযোগ করুন। দ্রুতই ভেরিফিকেশন হয়ে যাবে। আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা যদি ২ জেলাতে হয় তাহলে দুই জায়গাতেই ভেরিফিকেশন হবে। আপনার পাসপোর্ট কোন অবস্থায় আছে সেটা অনলাইনে জানতে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইটে গিয়ে এনরোলমেন্ট আইডি ও জন্মদিন দিয়ে লগ ইন করুন। তখন বর্তমান স্ট্যাটাস দেখতে পারবেন। যেমন পেন্ডিং ফর পুলিশ এপ্রুভাল।